সম্পদ দে : আমরা প্রত্যেকেই জানি যে, আমাদের ভারতবর্ষের ওপর ব্রিটিশরা ২০০ বছর ধরে শাসন করে গেছে। এই ২০০ বছরের ভেতরেই তারা নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে ভারতীয়দের উপর। সেইসঙ্গে প্রচুর দামি দামি হীরে-জহরত, মূর্তি নিয়ে গেছে তাদের দেশে।
এই ব্রিটিশ শাসনের কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় দেশের অত্যন্ত দুঃখের সেই ইতিহাসগুলি, যেখানে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কিভাবে একের পর এক প্রাণ হারিয়েছেন এই দেশের মাটিতে। তবে ব্রিটিশ শাসনকালের এই সমস্ত খারাপ দিকগুলি এক পাশে রাখলে আমাদের দেশের জন্য একটি ভালো কাজও হয়েছে বটে। আর সেই কাজটির নাম রেলওয়ে পরিষেবা।
ইংরেজ শাসনকালে ১৮৫৩ সালে প্রথমবার ভারতবর্ষে রেল পরিষেবা চালু হয়। এই রেল পরিষেবা প্রথম চালু হয়, মুম্বাই শহর থেকে থানে পর্যন্ত। এরপর একের পর এক রেল পরিষেবা বাড়তে থাকে ভারতবর্ষের মাটিতে। তবে স্বাধীনতার পরে দেশভাগের সময় এই রেলওয়ে পরিষেবাও ভাগ হয়ে যায় পাকিস্তান এবং ভারতের ভেতরে। তারপরে বাদবাকি সমস্ত কিছুর মতোই রেলওয়ে সিস্টেমও চলে আসে ভারত সরকারের অধীনে।
তবে আজকের খবরটি মোটেও ভারতীয় রেলওয়ের ইতিহাস সম্পর্কে নয়। বরং এক অদ্ভুত প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে। ভারতের প্রচুর এমন স্টেশন রয়েছে, যার পেছনে রয়েছে অদ্ভুত কিছু গল্প। এমন অনেক রেল রুটও রয়েছে যা কিনা পাওয়া যাবে একমাত্র ভারতবর্ষে।
যেমন পৃথিবীতে নদীর ওপরে অবস্থিত সবথেকে উঁচু রেল ব্রিজ আমাদের ভারতবর্ষের কাশ্মীরে অবস্থিত, যা কিনা সমুদ্রতল থেকে এতটাই উঁচু যে, এর নিচে আইফেল টাওয়ার দাঁড় করিয়ে দিলেও তা ছোট পড়ে যাবে। তবে এ তো কেবল নদীর উপরে তৈরি একটি ব্রিজ। আমরা যার কথা বলছি, তা নদীর উপর অবস্থিত একটি গোটা রেলস্টেশন। গোটা ভারতবর্ষের একমাত্র এমন রেলওয়ে স্টেশন, যেটি কিনা একটি নদীর উপরে অবস্থিত। আমরা কথা বলছি অসমে অবস্থিত বংগাইগাঁও স্টেশনের।
ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত স্টেশনটি বর্তমানে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ এবং ব্যস্ত একটি স্টেশনে রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে কেউ যদি কামরূপ কিংবা সরাইঘাট এক্সপ্রেস চেপে ঘুরতে বের হন, তাহলে এই স্টেশনের দর্শন সহজেই করতে পারবেন তিনি। স্টেশনটির উপর থেকে যে নদীটি বয়ে যাচ্ছে তার নাম হলো তুনিয়া নদী।
একটা সময় এই নদী বেশ স্রোতস্বিনী থাকলেও এখন এর অবস্থা মোটেও আগের মতো নেই। এখন এই নদীকে দেখলে এক বিশাল নালা কিংবা নর্দমা বলেই মনে হবে। কিন্তু নদীর এই রকম অবস্থা সব সময় থাকে না। বর্ষাকাল আসলেই বেশ ফুঁলে ফেপে উঠে এই নদীটি। এমনকি সেই সময় কখনো কখনো বন্যার পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়।
প্রতিবছর অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন কেবলমাত্র এই আজব রেল স্টেশনটি দেখার জন্য। রেলওয়ে স্টেশনটি অত্যন্ত ব্যস্ত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বটে। কারণ, ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের বাকি সমস্ত এলাকাগুলির যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য এই স্টেশনটির যথেষ্ট ভূমিকা আছে।
এমন কি আজকাল এও শোনা যাচ্ছে, যেহেতু এই স্টেশনটি গোটা ভারতবর্ষের একমাত্র এমন স্টেশন, যা একটি নদীর উপরে অবস্থিত, সেই জন্য এই স্টেশনের সৌন্দর্যের ওপর এবং সেইসঙ্গে এই নদীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং তার জৌলুস ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা হবে।
বর্তমানে ভারতীয় রেলওয়ে সিস্টেম এত দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে যে, অসমের স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, তাদের এই গর্বের স্টেশনটির কথা খুব দ্রুতই আরও বেশি থেকে বেশি পরিমাণ লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন