সমকালীন প্রতিবেদন : চাষবাস করে বছর শেষে বেশ ভালো লাভ করা সমস্ত চাষির কাছেই একটি স্বপ্নের চাওয়া। আর সেই স্বপ্নকেই সত্যি করছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার পূর্বস্থলীর ১ নম্বর ব্লকের কৃষক উমেশচন্দ্র দাস। তবে উমেশবাবু এই লাভ করছেন তথাকথিত সবজি কিংবা ফল চাষ করে নয়। বরং রেশমগুটি চাষ করে।
রেশমের গুটি চাষ করেই তিনি বছরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ করছেন ছোট্ট একটি জায়গা থেকে। ঘটনাটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সেটি সত্যি করে দেখিয়েছেন কৃষক উমেশচন্দ্র দাস। গতানুগতিক চাষাবাদে খাটনি অনুযায়ী আজকাল আর সেরকম মুনাফা নেই। সেই জন্যই গতানুগতিক চাষ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে রেশমের গুটি চাষ করে বেশ ভালই লাভের মুখ দেখছেন উমেশবাবু।
২০১৬ সালে তিনি গুটিপোকা চাষ শুরু করেছিলেন। বহরমপুর থেকে ট্রেনিং নিয়ে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর একটি ২০ ফুট লম্বা এবং ১২ ফুট চওড়া ঘরে প্রায় ৩০ হাজার রেশম পোকা চাষ করা শুরু করেন। দেখতে না দেখতেই ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখা শুরু করেন তিনি।
রেশনের গুটি পোকার খাবারের জন্য দেড় বিঘা জমিতে তিনি তুত পাতাও চাষ করা শুরু করেছেন। উমেশবাবুকে এই চাষ করার জন্য মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম থেকে এই রেশম পোকার ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়। ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে আসার দুদিনের মধ্যেই তা ফুটে গিয়ে তার থেকে লার্ভা বের হয়ে আসে। ১৫০ টি রেশন পোকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার এর কাছাকাছি ডিম হয়। এই রেশম পোকা চাষ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজিয়ে রাখতে হয় সেই ঘরে।
২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর ভেতরের তাপমাত্রা এই চাষের জন্য সবথেকে উপযোগী। প্রতি ১ হাজার রেশন পোকা থেকে প্রায় এক কেজির কাছাকাছি রেশমের গুটি পাওয়া যায়। একজন কৃষকের কাছে তা বেশ লাভজনক।
বর্তমানে গতানুগতিক চাষের পদ্ধতির বদলে এই লাভজনক রেশমের গুটি চাষ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন আশেপাশের অনেক কৃষকেরাই। এমনকি পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের বিডিও দেবব্রত জানা কৃষক উমেশবাবুর এই চাষ পদ্ধতি দেখে খুবই আপ্লুত।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে এই এলাকায় আপাতত একজনই এই রেশম চাষ করছেন। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বাজারে এই মুহূর্তে রেশমের ভালোই চাহিদা রয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে আমরা চাই, অন্যান্য কৃষকেরাও এই চাষ করার জন্য অনুপ্রেরণা পাক। অন্যান্য কৃষকেরা যদি এই চাষে এগিয়ে আসতে চান, তাহলে আমরা আমাদের তরফ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছি।'
রেশম চাষি উমেশচন্দ্র দাস বলেন, 'এলাকাতে এখন একমাত্র আমিই এই ধরনের চাষ করছি। তবে আমার এই চাষের পদ্ধতি এবং সেখান থেকে হওয়া লাভ দেখে অন্যান্য চাষীরাও এই চাষের প্রতি বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁরাও যদি এই চাষ করতে আগ্রহী হন, তাহলে আমাকে আর এই গুটিগুলিকে বাজারজাত করার জন্য বাইরে যেতে হবে না। এখানকারই সমস্ত চাষিরা এগুলিকে কিনে নিয়ে যেতে পারবেন।'
বর্তমানে কৃষক উমেশ দাস প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে সরকারও গতানুগতিক চাষের বদলে এই লাভজনক চাষে আরও বেশি পরিমাণে কৃষকদেরকে আগ্রহী করে তুলতে সাহায্য করে। বর্তমানে যেখানে সবজি কিংবা ফল চাষ করে মুনাফা তো দূরের কথা বরং কৃষকদেরকে লোকসানের মুখ দেখতে হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে লাভজনক এই রেশমের গুটি চাষে নতুন আসার আলো দেখতে পাচ্ছেন কৃষকেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন