সমকালীন প্রতিবেদন : উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় নকলে বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁকে রক্ষা করতে এসে আক্রান্ত শিক্ষিকা সহ অন্যান্য শিক্ষকেরাও। শুধু তাই নয়, পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে বাধা পেয়ে পরীক্ষার্থীদের একাংশ ব্যাপক ভাংচুর চালালো স্কুলে। পরীক্ষা চলাকালীন রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্কুল চত্বর।
বৃহস্পতিবার উচ্চমাধ্যমিকের ইংরাজী বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। মালদা জেলার কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের রথবাড়ি হাইস্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পরেছে বাঙ্গিটোলা, মোথাবাড়ি এবং মেহেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের। প্রথমদিনের পরীক্ষা অনেকটা নির্বিঘ্নেই কাটে।
এদিন ইংরাজি পরীক্ষার দেড় ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর স্কুলের ২০২/বি নম্বর ঘর পরিদর্শনে যান স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমন্বয় সরকার। সেইসময় তিনি লক্ষ্য করেন, এক পরীক্ষার্থী মোবাইল ফোন বের করে নকল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তার ফোনটি নিয়ে নেওয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পর আরও এক পরীক্ষার্থী পকেট থেকে বই এর পাতা বের করে নকল করার চেষ্টা করে। প্রধান শিক্ষক তার কাছে যেতেই সে বই এর পাতাটি ঘরের মেঝেতে ফেলে দেয়। প্রধান শিক্ষক বুঝতে পারেন, ওই পরীক্ষার্থীর পকেটে আরও চিরকুট রয়েছে।
এরপর তিনি ওই ছাত্রকে চিরকুটগুলি বের করে দেওয়ার জন্য বলেন। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও চাপের মুখে পরে পকেট থেকে সমস্ত চিরকুট বের করে দিতে বাধ্য হয় ওই পরীক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক এরপর ওই পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নিয়ে নেন।
এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই ওই ছাত্র আর পরীক্ষা দেবে না বলে পরীক্ষার হল থেকে ছুটে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রধান শিক্ষকও পিছু ধাওয়া করে তাকে থামানোর চেষ্টা করেন এবং পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলেন। তখন ওই ছাত্রের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়।
এরইমধ্যে ওই ঘরের বাকি পরীক্ষার্থীরা চিৎকার করতে শুরু করে যে, প্রধান শিক্ষক এক পরীক্ষার্থীকে মারধোর করছে। এই নিয়ে হইচই শুরু হতেই কিছু পরীক্ষার্থী ছুটে এসে প্রধান শিক্ষককে মারধোর শুরু করে। আর তাতে তাঁর মুখে আঘাত লেগে রক্ত বেরিয়ে যায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুহূর্তের মধ্যে রক্ষক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। মারমুখী পরীক্ষার্থীদের হাত থেকে প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করতে এসে আক্রান্ত হন ওই স্কুলের আরও কয়েকজন শিক্ষক–শিক্ষিকা। খবর পেয়ে মোথাবাড়ি থানা থেকে ছুটে আসে পুলিশ।
এদিন পরীক্ষার্থীদের তান্ডবে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে স্কুলের বেশ কয়েকটি চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিদ্যুতের সরঞ্জামও। নকলে বাধা দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা যে এমন কান্ড ঘটাতে পারে, তা ভাবতেও পারেন নি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষকেরা।
ওই স্কুলের বিভিন্ন অংশে লাগানো রয়েছে সি সি ক্যামেরা। এদিনের তান্ডবের ঘটনার অনেকটাই ধরা পরেছে সেই ক্যামেরায়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্কুলের সি সি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত ছাত্রদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন