শম্পা গুপ্ত : নিজের জীবনের বিশেষ বিপদের সময় উপলব্ধি করেছেন, রক্ত একজন মানুষের জীবনে কতটা প্রয়োজন। আর সেই উপলব্ধি থেকে রক্তদান শিবিরের কথা কানে শুনলেই রক্ত দান করতে সেখানে ছুটে যান গৌরীনাথ রজক। আর এই কাজ করে মানসিকভাবে তৃপ্তি পান তিনি।
পুরুলিয়া জেলার ঝালদা শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চাটানিপাড়ার বাসিন্দা গৌরীনাথ রজক। ঝালদা পুরসভার অস্থায়ী কর্মী বছর আঠাশের গৌরীনাথ। ছোটবেলায় শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ থাকলেও চার বছর বয়সে বাঁপায়ে সংক্রমণ হয় তার। পরিবারের লোকেরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্তা করেন। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি।
অবশেষে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, গৌরীনাথের পা সংক্রমিত হয়। আর সংক্রমণ এতটাই মারাত্মক যে বাঁপায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত তাই করতে হয়।
সেই সময় তার চিকিৎসার জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তার মাকে রক্ত জোগাড় করার জন্য প্রচুর ছোটাছুটি করতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত অবশ্য রক্ত রোগাড় হয়েছিল। আসে আসে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন গৌরীনাথ। ওই বয়সেই উপলব্ধি করেছিলেন, মানুষের জীবনে রক্তের প্রয়োজন কতটা।
এরপর থেকে তার জীবনের সর্বসময়ের সঙ্গী হয়ে ওঠে একটি মোটা বাঁশের লাঠি। বাঁ পায়ের বদলে এই লাঠির উপর ভরসা করেই চলাচল করেন গৌরীনাথ। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ছোটবেলার উপলব্দিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রক্তদান শিবিরে হাজির হয়ে রক্ত দান করেন।
সোমবার এভাবেই পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হলে নিহত কাউন্সিলার তপন কান্দুর স্মরণে আয়োজিত একটি রক্তদান শিবিরে লাঠি ভর দিয়েই পৌঁছে যান গৌরীনাথ। আর সেখানে রক্ত দানও করেন। পরে তিনি জানান, 'যখন ভাবি, এই রক্ত কোনও মুমূর্ষু মানুষের কাজে লাগবে, তখনই মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। একটুও কুণ্ঠাবোধ হয়না। মনে হয় আরও রক্ত দান করি।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন