সমকালীন প্রতিবেদন : দেশ থেকে বিদেশ, সর্বত্রই বাঙালিদের অন্য নাম 'মাছে ভাতে বাঙালি'। প্রায় সমস্ত মানুষই জানে, বাঙালির কাছে খাওয়ার পাতে মাছ ও খাওয়ার পরের ভাত ঘুম অত্যন্ত পছন্দ। তবে বাঙালির এই মাছ প্রেম নিয়ে মজা করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু সেই ঠাট্টার প্রত্যুত্তরে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শরীরে পুষ্টি জোগাতে এখন খেতে বলছেন বেশি করে মাছ।
বাংলা একটি নদীমাতৃক রাজ্য। তার উপরে আবার রাজ্যের দক্ষিণ অংশ অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বিশাল সমুদ্র। ফলত প্রতিটি বাঙালির মনে যে মাছের জন্য একটি আলাদা স্থান থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। খাঁটি বাঙালির আবার স্বভাব, বাজারে গিয়ে মাছের কানকো দেখে মাছ না কিনলে তার ঠিক পোষায় না।
নোনা জলের ইলিশ হোক কিংবা মিষ্টি জলের রুই, ভাতের পাতে এক টুকরো পেঁটি বা ল্যাজা না হলে খাওয়াই যেন অপূর্ণ থেকে যায়। আর এইবার বাঙালির সেই পছন্দের মাছকেই এক আদর্শ ডায়েট বলছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি মানুষের জন্য বলছেন, সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন খাবারের পাতে অবশ্যই মাছ রাখা উচিত। বিশেষ করে যদি তৈলাক্ত মাছ হয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তৈলাক্ত মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা কিনা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপকরণ।
নিয়মিত মাছ খেলে তা মস্তিষ্কে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বড় মাছ হোক কিংবা ছোট, উপকার পাওয়া যাবে সবেতেই। বাড়ির ছোটদেরকে অনেক সময়তেই পুঁটি মাছের মতো ছোট মাছ খেতে বলা হয়। ছোট মাছ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত উপকারী বলা হয়ে থাকে।
সেই সঙ্গে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানাছেন, যারা যারা সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কিংবা তার থেকেও বেশি দিন মাছ খেয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য সকলের থেকে মস্তিষ্কের নিউরন কোষ অনেক বেশি কর্মক্ষম এবং সুগঠিত হয়। বড় এবং তৈলাক্ত প্রচুর ধরনের মাছ পাওয়া যায়। যেমন, রুই, কাতলা, পমফ্রেট, ভেটকি, বোয়াল, চিতল ইত্যাদি।
এই সমস্ত তৈলাক্ত মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়োডিন, প্রোটিন, ফসফরাস, ভিটামিন ডি সহ বিভিন্নরকম খনিজ পদার্থ, যা কিনা মস্তিষ্কের সমস্ত কোষকে সচল রেখে মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সারাদিনের বিভিন্ন কাজ করার জন্য শরীরে শক্তি যোগায়। ফলে শরীরে সহজে দুর্বলতা আসে না।
সেইসঙ্গে এতে থাকা আয়োডিন চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সেই জন্যই চোখ ভালো রাখার জন্য বিশেষত বাচ্চা এবং বয়স্কদেরকে মাছ খেতে বলা হয়। তাহলে এখন থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন তো মাছ রাখতেই হবে নিজেদের পাতে। তবে অতিরিক্ত তেল মশলা দিয়ে রান্না করলে পাওয়া যাবে না কোনোও উপকার।
মাছ যেরকম মুখের স্বাদ ভালো রাখতে ব্যবহার করা হয়, তেমনভাবেই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে কম তেল মসলা দিয়ে হালকাভাবে রান্না করেই যেকোনও রকম মাছ খাওয়া উচিত। তাহলেই মস্তিষ্ককে সচল রাখার জন্য হোক কিংবা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, মাছ আপনাদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবে সর্বদা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন