সমকালীন প্রতিবেদন : শেষ পর্যন্ত ভয়টাই হয়তো সত্যি হতে চলেছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা অনুযায়ী এবার বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষের দেহেও। এমনকি আশঙ্কা কেবলমাত্র এখানেই থেমে নয়। এই বার্ড ফ্লু এবার ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষের থেকে মানুষের মধ্যেও। বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ হিসাবে উদাহরণ দিচ্ছেন, একজন বাবা এবং তার মেয়ের, যারা কিনা একসঙ্গে আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে।
তবে বার্ড ফ্লু নিয়ে এইবার এত নজরদারি কেন? এতদিন ধরে বার্ড ফ্লু নিয়ে সকলের মধ্যেই মোটামুটি নানা ধরনের সতর্কতা ছিল। মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে কিনা অথবা মানুষের দ্বারা আর একজন মানুষ সংক্রমিত হতে পারে কিনা, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে কোনওরকম সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না।
তবে বাবা আর মেয়ে একসঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই আতঙ্ক বাড়ছে চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী মহলে। বার্ড ফ্লু নতুন কিছু নয়, প্রায় প্রতিবছরই ফিরে ফিরে আসতে দেখা যায় এই রোগকে। বিভিন্ন পাখি এবং বিশেষত হাঁস এবং মুরগিদের ভেতরে এই রোগের প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
তবে অন্যান্য বারের থেকে এবার অনেক বেশি ভয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা।বিজ্ঞানীদের এই আতঙ্কে থাকার কারণও আছে বৈকি। সদ্য দেখা গেছে, কেবলমাত্র পাখিদের প্রজাতি নয়, বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীরাও এই বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি এটাও দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত এক পশুর থেকে অন্য পশুও সংক্রমিত হচ্ছিল।
আর ঠিক এখানেই বিজ্ঞানীদের আসল ভয়। তাদের আশঙ্কা, ঠিক এভাবেই এই বার্ড ফ্লু-র দ্বারা এবার আক্রান্ত হতে চলেছে বহু মানুষও। সদ্য কাটতে শুরু করেছে মহামারী করোনার প্রভাব। আর তার মধ্যেই বিজ্ঞানীদের এই বার্ড ফ্লু কে নিয়ে আশঙ্কা যে, এই বার্ড ফ্লুয়ের জীবাণুও করোনার মতই মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
ফলে আগামী দিনে মানব শরীরকে খুব সহজেই আক্রমণ করে ধরাশায়ী করে দেওয়ার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠবে এই বার্ড ফ্লু রোগের জীবাণু। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই আশঙ্কা হয়তো সত্যিতে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের এই আশঙ্কা শুরু হয়েছে কম্বোডিয়ায় এই রোগে আক্রান্ত দুজন ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ার পর থেকে। তারা সম্পর্কে বাবা এবং মেয়ে। তারা দুজনেই সংক্রমিত হয়েছেন এই বার্ড ফ্লু রোগে।
অনেকেরই দাবি, প্রথমে মাত্র একজন সংক্রমিত হয়েছিলেন। তারপর তার থেকে অন্য আরেকজন সংক্রমিত হয়েছেন। বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত এই বাবা-মেয়ের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে ইতিমধ্যেই কম্বোডিয়ায় এই বিষয়টিকে নিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বার্ড ফ্লুকে নিয়ে কম্বোডিয়ার সরকারের মতামত কি। বাবা এবং মেয়ের ক্ষেত্রে এই বার্ড ফ্লু রোগটি নিজেদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়েছে বলে চারিদিকে খবর ছড়ালেও কম্বোডিয়ায় সরকারিভাবে বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছে।
সরকারি মতে, এই দুইজন বার্ড ফ্লু তে আক্রান্ত হলেও সেটা তাদের মধ্যে একজনের থেকে অন্যজনের ছড়ায়নি। বরং তারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পোলট্রিতে রাখা এই রোগে আক্রান্ত পাখি থেকে। তবে সরকারের এই যুক্তি দেওয়ার পর থেকেই এই বিষয়টিকে নিয়ে দুটি দল ভাগ হয়ে গিয়েছে। যাদের মধ্যে একদল সরকারের এই বয়ানটিকে সমর্থন করছে, সেখানে আরেক দল সরকারের এই কথা এখনো মানতে নারাজ।
তবে বিজ্ঞানী থেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সকলেরই এই মুহূর্তে আশঙ্কা, গোটা পৃথিবী সদ্য একটি অতিমারির প্রকোপ সামলে উঠছে। ঠিক তার মধ্যেই এই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে গোটা পৃথিবীকে আবারও একটি অতিমারির ধাক্কা না সহ্য করতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন