সম্পদ দে : কথায় আছে, 'যেটুকু চাদর, সেইটুকুই পা ছড়ানো উচিত'। তবে কথাটি যে সম্পূর্ণ ভুল, তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলেন কেরলের বাসিন্দা শ্রীনাথ। কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়কে সঙ্গী করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছালেন শ্রীনাথ।
স্টেশনে কুলির কাজ করতে করতেই সেখানকার ফ্রি ওয়াইফাইতে পড়াশোনা করে ইউপিএসসি পরীক্ষায় তাক লাগানো সাফল্য অর্জন করেছেন শ্রীনাথ। আসলে ইচ্ছা থাকলে যে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়, তা প্রমাণ করেছেন তিনি। তাঁর সাফল্যের গল্প হার মানাবে একটি বলিউড সিনেমাকেও।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমানে রীতিমতো ভাইরাল শ্রীনাথের এই সাফল্যের কাহিনী। আর ভাইরাল হবে নাই বা কেন। তিনি যে লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজের সাফল্য অর্জন করে নিয়েছেন তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সবাই।
শ্রীনাথ আসলে কেরলের বাসিন্দা। সংসারে আর্থিক অবস্থা কখনোই ভালো ছিল না খুব একটা। ঘর সংসার চালানোর জন্য তিনি রেল স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন। নিজের সংসারের বোঝা বইতে স্টেশনে অন্যান্য লোকের বোঝা ঘাড়ে করে বয়ে বেরিয়েছেন শ্রীনাথ।
তবে সেই হাড় ভাঙা খাটনির মধ্যেও নিজের লক্ষ্যের কথা ভোলেন নি তিনি। শেষ পর্যন্ত কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে আজ তিনি আইএএস অফিসার। শ্রীনাথের সব সময় ইচ্ছে ছিল, তিনি এমন কিছু একটা করে দেখাবেন, যাতে অন্যান্য সবাই তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়।
আজ নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকায় সেই স্বপ্নও পূরণ হলো তাঁর। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, 'We will win. Not immediately, but definitely'। আর শ্রীনাথ সেই কথাটাকে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে দেখালেন যে, কঠোর পরিশ্রম করতে থাকলে আজ না হলেও কাল তুমি অবশ্যই জিতবে।
সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করার পরেও রাত জেগে পড়াশোনা করতেন শ্রীনাথ। যখন কুলি হিসেবে যাত্রীদের লাগেজ বহন করতে হতো, তখন তিনি অনলাইন কোর্সের অডিও শুনতেন। আর ফাঁকা সময় রেলের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস করতেন।
আর এভাবেই কঠোর পরিশ্রমের কারনে আজ শ্রীনাথ সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর আগেও দুবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন শ্রীনাথ। তবে সেই দুবারই সাফল্য মেলেনি। তাতে তিনি নিরাশ হননি। বরং আরও বেশি অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করে লড়াই করে গেছেন বারবার।
শেষ পর্যন্ত তামাম ভারতবাসীকে চমকে দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এইবার। এমনকি অন্যান্য উচ্চতম আধিকারিকরাও তাঁর এই সাফল্যের গল্প শুনে বেশ আপ্লুত।
শ্রীনাথেরও আশা, তাঁর এতদিনের এই কষ্ট যেভাবে তাঁকে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের পথ দেখিয়েছে, ঠিক সেভাবেই তাঁর এই কঠিন পরিশ্রমের কাহিনী বাকি সমস্ত দেশবাসীকেও নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন