সম্পদ দে : কড়া রোদ মাথায় নিয়ে ফসল চাষ করে আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেন কৃষকরা। সেই জন্যই কৃষকদেরকে আমরা অন্নপূর্ণার আর এক রূপও বলে থাকি। তবে আজ আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া সেই কৃষকদের অবস্থাই দেশে সবথেকে খারাপ।
ভারতবর্ষকে বলা হয়ে থাকে কৃষিনির্ভর দেশ। চাল, ডাল থেকে শুরু করে সমস্তরকম সবজি– এই সব কিছুই চাষ হয় আমাদের দেশে। যার কারণে খাদ্যের দিক থেকে আমরা অন্য কোনও দেশের উপরে নির্ভরশীল নই।
কিন্তু এই কৃষিক্ষেত্রে যেই কৃষকরা আমাদের দেশকে আত্মনির্ভরশীল বানিয়েছে, তারা নিজেরাই এখনও পর্যন্ত আর্থিক দিক থেকে নির্ভরশীল হতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়কার খবর, মহারাষ্ট্রের একজন কৃষক রাজেন্দ্র তুকারাম। দিন-রাত পরিশ্রম করার পর ৫১২ কেজি পেঁয়াজের ফলন হয় তার ক্ষেতে।
যথারীতি সেই ৫১২ কেজি পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করার জন্য নিজের গ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শহরে এসেছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন গত বছরের মতই পেঁয়াজগুলি বিক্রি করে ঠিকঠাক দাম পাবেন। যদিও শেষপর্যন্তসমস্ত পেঁয়াজ বাবদ তাঁর আয় হলো মাত্র ২ টাকা!
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষী রাজেন্দ্র তুকারামকে। তুকারাম ভেবেছিলেন, সলাপুর এগ্রিকালচার মার্কেট কমিটির কাছে নিজের চাষ করা এই ৫১২ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে বেশ ভালই লাভ করবেন। তবে এই ৫১২ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি হাতে পেলেন মাত্র ২ টাকা ৪৯ পয়সার একটি চেক।
৫১২ কেজি পেঁয়াজের প্রতি কেজি মাত্র ১ টাকায় বিক্রি হয়। তুকারামের মোট পাওয়ার কথা ছিল অন্তত ৫১২ টাকা। তবে পেঁয়াজ নিয়ে আসা ও গাড়ি থেকে মাল খালি করার পেছনে বেশ কিছুটা খরচ হয়েছে। সেই জন্য 'কৃষি উৎপাদন ও প্রাণিসম্পদ বাজার কমিটি' ৫০৯.৫ টাকা কেটে নেয়। বাকি পড়ে থাকা দুই টাকার চেক দেওয়া হয় তুকারামকে।
তুকারাম এই ঘটনার পরে এখনোও পর্যন্ত নিজেকে মানসিকভাবে সামলে উঠতে পারেননি। তিনি জানান, গত বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে এইদিন হাজারবার অনুরোধ করার পরেও প্রতি কেজি ১ টাকার থেকে বেশি দাম দিতে চায়নি কেউ। উল্টে আয় হওয়া ৫১২ টাকার থেকেও ৫০৯ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।
তুকারাম বেশ ক্ষোভ এবং দুঃখের সঙ্গে আরও জানান, এই বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এই পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। লাভ তো দূরের কথা, চারার দামটুকু পর্যন্ত উঠল না। পেঁয়াজ বিক্রি করে পাওয়া চেক ব্যাংকে ভাঙিয়ে টাকা পেতেও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু, মাত্র ২ টাকার একটি চেক ভাঙিয়েওবা কি করবেন তুকারাম।
এই নির্মম খবর জানার পর থেকেই রীতিমতো মর্মাহত গোটা নাগরিক মহল। আসলে বর্তমানে দেশের বহু কৃষকদের অবস্থা মহারাষ্ট্রের এই তুকারাম এর মতোই। যারা দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেন, তাদের নিজেদের অন্নের জোগাড় করাই আজ অসম্ভব হয়ে উঠছে। সেই জন্যই হয়তো আজ ভারতবর্ষ কৃষকদের আত্মহত্যার তালিকায় দিন দিন এগিয়েই যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন