Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

তরল সোনা সভ্যতার আলো দেখিয়েছিল

liquid-gold

তরল সোনা সভ্যতার আলো দেখিয়েছিল

অজয় মজুমদার

খনিজ এবং অপরিশোধিত তেলই হল তরল সোনা৷ এই সোনা মূলত হাইড্রোকার্বন এবং অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। এদের মধ্যে কার্বন এবং হাইড্রোজেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অপরিশোধিত তেলকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। মাটির নিচে থেকে যে তরল জ্বালানি তোলা হয়, তাকে পেট্রোলিয়াম বলে। এই তরলের গুরুত্ব এতটাই যে, এই মজুতের ওপর দেশের দাদাগিরি সম্পূর্ণ নির্ভর করে। এই কারণেই পেট্রোলিয়ামকে তরল সোনা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। 

তেল প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রথমে আদিম পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল৷ জলাধারের পৃষ্ঠ থেকে তেল সংগ্রহ করা, কুপ ব্যবহার করে তেল দিয়ে ভেজানো বেলেপাথর বা চুনাপাথর প্রক্রিয়াকরণ করা। প্রথম পদ্ধতি সিরিয়ায় ব্যবহৃত হয়েছিল৷ দ্বিতীয়টি ১৫ শতকে ইতালিতে৷ উন্নয়নের শুরু তেল কারখানা দিয়ে৷ 

১৮৫৯ সালে তেল কূপের যান্ত্রিক খনন শুরু হয়। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সমস্ত তেল বোরহলের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়৷ যেখানে ভূতাত্মিকেরা এর ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছেন, সেই সব জায়গায়ই তেল পাওয়া যাচ্ছে। তার অবস্থান হতে পারে জলে কিংবা স্থলে। 

সবচেয়ে তেলের বড় মজুদ হলো আরব দেশগুলো। ইরাক, ইরান, সৌদি আরব তাদের অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়েছে বিদেশের কাছে তেল বিক্রি করে। তেল, গ্যাস উৎপাদনের প্রধান কাজ ড্রিলিং করা৷ সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগরে তরল সোনার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বনগাঁ মহকুমা জুড়ে সার্ভে চলছে৷ অনেকের মনেই আনন্দ। কোটি কোটি টাকার হাতছানি৷ অনেকের মনে আবার আতঙ্ক, ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে না তো ? টাকা পেলেও টাকা দিয়ে কি হবে? সাজানো গোছানো সংসার, কোথায় যেতে হবে কে জানে! চাকরিপ্রার্থীদের সুযোগ আসবে। এই নিয়ে জনমানসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে৷

পেট্রোলিয়াম কথাটি এসেছে ল্যাতিন ভাষা থেকে৷ পেট্রো মানে পাথর, আর অলিয়ম বলতে বোঝায় তেল। অর্থাৎ পাথরের বুকে সঞ্চিত তেল৷ প্রাচীন এবং নবীন প্রস্তর যুগে ঘর বানানোর কাজে বিটুমিন (পেট্রোলিয়ামের প্রাচীন নাম) মানুষ ব্যবহার করত৷ মিশরীয়দের মমি সংরক্ষণ করার কাজে প্রয়োজন হতো খনিজ তেল৷ শোনা যায়, চীন ও জাপান দেশের মানুষ পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করতে শিখেছিল তৃতীয় শতকে৷ ১৮১৫ সালে চেকোশ্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের রাজপথ আলোকিত হতো পেট্রোলিয়ামের শক্তিতে৷

সারা পৃথিবীতে ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে খনিজ তেলের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ১৮৫৯ সালে। যখন এডউইন ড্রেক আমেরিকার পেন্সিলভেনিয়ার প্রথম সফল খনিজ তেলের কুপ খনন করেনi খনিজ তেলের হাইড্রোকার্বনের ভেতরে রয়েছে মূলত প্যারাফিন, ন্যাপথিন এবং বেনজিন। যদিও এদের আনুপাতিক ভাগ তেলে সমান নয়। খনিজ তেলের সঙ্গে আর যা অল্প-স্বল্প মিশে থাকে, তাহলো অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, গন্ধক, সামান্য ভ্যানাডিয়ান এবং নিকেল। 

প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় পেট্রোলিয়ামের সঙ্গেই৷ তার মূল উপাদান মিথেন গ্যাস (৮০%) এবং আনুষঙ্গিক কিছু পরিমাণ ইথেন, প্রোপেন, বুটেনের মতো হাইড্রোকার্বন গ্যাস। খুব সামান্য নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, সালফাইড, কার্বন-ডাই অক্সাইড, কিছু বিরল গ্যাস ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মিশে থাকে৷

মানব সভ্যতার বিকাশ এবং অগ্রগতির জন্য পেট্রোলিয়াম আজ এতই অপরিহার্য যে, এই সভ্যতাকে পেট্রোলিয়াম সভ্যতা বললেও কেউ আপত্তি করবে না৷ কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক শক্তিগুলির সংঘর্ষে ভূত্বকের স্তরে ভাঁজ পড়ল৷ নীল সমুদ্র ফুঁড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো দীর্ঘ ভঙ্গিল পর্বতমালা। আবার স্থলভাগের কোথাওবা শিলাচ্যুতির ফলে সৃষ্টি হল নতুন সমুদ্রের৷ এমনিভাবে প্রাকৃতিক ভাঙা গড়ার পালায় মহাদেশ এবং সমুদ্রের সীমানা বদল হলো যুগে যুগে৷ 

খনিজ তেল বিশেষজ্ঞরা মাটির স্বভাব বিচার করে দেখেছেন, খনিজ তেল থাকে পাথরের ভেতরে। তার অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্যে৷ যেমনভাবে স্পঞ্জ এর মধ্যে থাকে জল। এভাবে পাথরের ছিদ্রের ভেতরে কোনও তরল পদার্থকে বাসা বাঁধতে দেয় তাদের বলা হয় প্রবেশ্য শিলা। যেমন বালিপাথর, চুনাপাথর ইত্যাদি।

সবশেষে বলা যায় এই তরল সোনা মজুদ কমে আসছে৷ আগামী ৫০-৬০ বছরের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখন সভ্যতা কি ধ্বংস হবে ? না নাকি অন্য শক্তির আবিষ্কার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে, সেটাই দেখার বিষয়।‌‌‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন