শম্পা গুপ্ত : ২০১২ থেকে ১৩ সাল নাগাদ প্রতিটি মানুষ এবং বিশেষত মহিলাদের মুখে মুখে ঘোরাফেরা করতো বীনা কালিন্দী নামটি। প্রতিটি নাবালিকার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল একসময় বীনা। নিজের বাড়ি থেকে এক সময় জোর করে বিয়ে দিতে চাওয়া নাবালিকা নিজেই নিজের বাল্যবিবাহ রুখে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের হাত থেকে সম্মানও পেয়েছিলেন। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের সেরেংডি অঞ্চলের ভুরশু গ্রামের সেই ছোট্ট নাবালিকা মেয়েটির নাম বীনা কালিন্দী।
তবে একসময়ের অনুপ্রেরণা সেই বীনা কালিন্দীর সংসার আজ ধুঁকছে আর্থিক প্রতিবন্ধকতায়। ২০১২ সাল নাগাদ প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করা হয় বীনার। সেই সময় তার বয়স ছিল ১১ কি ১২ বছর। বিনার পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছা থেকে সে স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে এবং শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে নিজের বাল্যবিবাহ রোধ করে।
তারপর সময় গড়িয়েছে অনেকটা। অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে তিনি আজকে স্নাতক। তবে সেই সঙ্গে আজ তিনি একজনের স্ত্রীও। একটি ছোট ফুটফুটে সন্তানও আছে তার। তবে সেই সংসার চালানোর জন্যই আজ টাকা নেই বীণা কালিন্দীর কাছে। বীনার স্বামী পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডের একটি হোটেলে কাজ করেন। সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয় তাদেরকে।
তবে মাসখানেক আগেই একটি বাইক অ্যাক্সিডেন্টের কারনে পায়ে চোট লাগায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে কাজ করতে পারছেন না তিনি। আর সেটা নিয়েও বেশ চিন্তায় আছেন বীনা। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার সময় প্রচুর লোক এই বীনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন তার পাশে থাকার।
কিন্তু বর্তমানে তাঁদের একজনেরও খোঁজ পাওয়া দায়। স্নাতক হওয়ার পরে আরও পড়াশোনা করতে চান বীনা। তবে সেই সঙ্গে নিজের পড়াশোনার ভার এবং সংসার চালানোর জন্য একটি চাকরির খোঁজেও আছেন তিনি। বীনার কাছে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, 'স্নাতক হওয়ার পরে ভেবেছিলাম একটা চাকরি ঠিক জুটে যাবে, তবে আজ পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম।'
বীনা বেশ কিছুটা আফসোসের সঙ্গে এও বলেন যে, 'একসময় বাল্যবিবাহ রুখে সবার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিলাম। একটা সময় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছি। তবে এতকিছু করার পরেও বর্তমানে আমার যা অবস্থা তা দেখে অন্য কোন মেয়েকে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারব কিনা জানিনা'
বীনা জানান, ইতিমধ্যেই তিনি ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে তার এই পরিস্থিতির বিষয়ে আর্জি জানিয়েছেন। বীনার প্রতিবেশী শিবানী রজক জানান, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, বীনা কালিন্দীর যদি কোনও একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তাহলে জেলা জুড়ে আবারও বীনার বাল্যবিবাহের প্রতিরোধ করার বার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
বীনা কালিন্দীর বর্তমান পরিস্থিতির কথা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক দেবরাজ ঘোষের কাছে পৌঁছানোর পর তিনি জানান, 'বীনার কষ্টের কথা আমি শুনেছি। তিনি পারলে একবার আমার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করুন। তারপরে কিছু না কিছু ব্যবস্থা করার আমি অবশ্যই চেষ্টা করব।'
সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক দেবরাজ ঘোষের দেওয়া এই আশ্বাসে খানিকটা আশ্বস্ত হয়েছেন বীনা। তবে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি। বর্তমানে বীনা এবং তার গোটা পরিবার তাকিয়ে প্রশাসনের দিকে কেবলমাত্র একটি চাকরির আশায়, যাতে তিনি তার পড়াশোনা এবং সংসার– দুটোই সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন