সমকালীন প্রতিবেদন : ছাত্রাবস্থাতেই শিক্ষা পেয়েছিলেন দরিদ্র–অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের সহযোগিতায় নিজেকে নিয়োজিত করার। আর সেই নৈতিক শিক্ষাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন 'গরিবের ভগবান' একজন চিকিৎসক। শুধু বিনামূল্যে চিকিৎসা করাই নয়, বিনামূল্যে ওষুধও দিচ্ছেন তিনি।
জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ। এই নিয়েই প্রকৃতির সঙ্গে একপ্রকার লড়াই করে জীবনযাপন সুন্দরবনের মানুষের। সুন্দরবন লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ব্লকের ন্যাজাট থানার বয়ারমারী ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের খাশদহ গ্রামের বছর ৩৬ এর ফারুক হোসেন গাজী এই গ্রাম থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন, এই এলাকার দরিদ্র মানুষেরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। অভাবকে সঙ্গী করেই স্থানীয় রাজবাড়ি আগারহাটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে আল আমিন মিশনে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পান ফারুক। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সুযোগ পান ডাক্তারি পড়ার।
এরপর বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ২০১২ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। গ্রামের সেই হতদরিদ্র ছেলেটি এখন ডা: ফারুক হোসেন গাজী। স্থানীয়ভাবে যিনি গরীবের ভগবান নামে আখ্যায়িত হন। নিজের জীবনে এই বিশেষণ প্রাপ্তির পেছনেও রয়েছে বিশেষ কারণ।
পড়াশোনা চলাকালীন আল আমিন মিশন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষাগুরুদের সান্নিধ্য পান ফারুক। সেখানথেকেই তিনি শিক্ষা পান, জীবনে চলার পথে দরিদ্র–অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। সেই নৈতিক শিক্ষাকে মাথায় রেখেই ২০১২ সালে ডাক্তারি পাশ করে ফারুক সোজা চলে আসেন নিজের গ্রামে।
এরপর গ্রামেই শুরু করে দেন বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার কাজ। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'নবদিগন্ত' নামে একটি সংস্থা, যেখানে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বই, খাতা, ব্যাগ, পোষাক ইত্যাদি।
সেই স্কুলঘরেই প্রতি শনিবার বিনামূ্ল্যে রোগী দেখছেন ডা: ফারুক হোসেন গাজী। শুধু রোগী দেখা নয়, অধিকাংশ ওষুধই সেখান থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ইসিজি, নিবুলাইজার, অক্সিজেনের পরিষেবাও দিচ্ছেন বিনামূল্যে। আর অর্ধেক খরচে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতি শনিবার সুন্দরবন লাগোয়া এই গ্রামে গেলেই দেখা যায়, মেছোঘেরির আলপথ ধরে মানুষের স্রোত মিশেছে একটি ছোট্ট স্কুলঘরে। আর সেই স্কুলঘরের ভেতরে বসে ক্লান্তিহীনভাবে অসহায় মানুষদের সুস্থ করে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছেন ডা: গাজী। তাঁর এই মানবিক রূপে খুশি গ্রামের মানুষ।
ডা: গাজী এখানেই থেমে থাকেন নি, ওই এলাকার স্কুল–কলেজের ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামের মানুষের বিনামূল্যে প্রেসার, সুগার, ইসিজি মাপার কাজ শিখিয়েছেন। সুন্দরবন অঞ্চলের মেয়েদের স্যানেটারী ন্যাপকিন ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন করে তুলেছেন।
সচেতন করে তোলার সঙ্গে শুরু করেন বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করার কাজও। তাঁর এই সামাজিক এবং মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এ নামও উঠেছে ডা: ফারুক হোসেন গাজীর। তাঁকে নিয়ে গর্বিত গোটা এলাকার মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন