সম্পদ দে : ভারতবর্ষ একটি কৃষি প্রধান দেশ, যেখানে প্রতিবছর এত পরিমানে চাল, ডাল, গম উৎপন্ন হয় যে আমরা তা অন্যান্য দেশদেরকেও রপ্তানি করে থাকি। আর এই সমস্ত কিছুর পেছনে আছেন দেশের কৃষকরা। তারা সারা বছর জমিতে কাজ করে, লাঙল চালিয়ে, জমিতে জল দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের জন্য দুবেলার দুমুঠো খাবার যোগান দেন।
তবে যারা আমাদের খাবারের চিন্তা দূর করেন, তাঁদের মাথাতেই সারা বছর চাষবাস নিয়ে নানা চিন্তা বাসা বাঁধে। চাষ করে ফসল ফলাতে গেলে জমিতে সময় মতো জল অবশ্যই দিতে হবে। আর জমিতে জল দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় পাম্প, যা কিনা চলে ডিজেলের মাধ্যমে। তবে দিন দিন তেলের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল দেওয়ার জন্য পাম্প চালাতে পারছেন না কৃষকরা।
কিন্তু থেমে থাকলে তো চলবে না। তাই এই সমস্যা দূর করতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা না করা সত্ত্বেও কঠিন প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্যাস দিয়ে চালানো পাম্প সেট তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের মজিফুল ইসলাম।
মজিফুল পেশায় একজন চাষী। দিনের পর দিন তেলের দাম বাড়তে থাকা দামের কারণে অন্যান্য চাষীদের মতো সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল তাঁকেও। তবে হার না মেনে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই কাজে লেগে পড়েন মজিফুল। শেষ পর্যন্ত প্রচুর মাথা খাটানোর পরে তিনি তৈরি করে ফেলেন গ্যাস চালিত পাম্পসেট।
আগে যেখানে ডিজেল দিয়ে এক ঘন্টা পাম্প চালানোর জন্য খরচ পড়তো প্রায় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, সেখানেই গ্যাস চালিত এই পাম্প চালাতে এখন প্রতি ঘন্টায় খরচ হয় মাত্র ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ছয় থেকে সাত গুণ কম। চোপড়া ব্লকের ঘিরনিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিকপাড়া এলাকার বাসিন্দা হলেন কৃষক মজিফুল ইসলাম।
মজিফুলকে তার এই আবিষ্কার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, দিল্লিতে থেকে কাজ করাকালীন তাঁর চোখে পড়ে সিএনজি গ্যাস চালিত বিভিন্ন যানবাহন। সেখান থেকেই তাঁর মাথায় বুদ্ধি আসে গ্যাসের মাধ্যমে চালিত পাম্পসেটের ব্যাপারে। তারপর বাড়ি ফিরে প্রায় ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজকের এই গ্যাসের মাধ্যমে চালিত পাম্প।
কেবলমাত্র গ্যাস চালিত পাম্পসেটই নয়, এর আগেও মজিফুল পরীক্ষামূলকভাবে বানিয়ে ফেলেছেন গ্যাসের মাধ্যমে চালিত আস্ত একটি বাইক। যাতে কিনা এক লিটার গ্যাস ভরলে পাড়ি দেওয়া যায় প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটারের কাছাকাছি পথ। বর্তমানে তাঁর তৈরি করা পাম্প সেট কাজে লাগছে অন্যান্য চাষীদেরও।
তাঁর তৈরি করা সেই পাম্প সেট জমিতে জল দেওয়ার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যান অন্যান্য চাষীরা। জহিরুল ইসলাম নামের এক চাষী জানান, এই পাম্প ব্যবহার করে তাদের প্রচুর খরচ কমে গেছে। আগে যেখানে এক লিটার তেল দিয়ে এক ঘন্টাও পাম্প চালানো যেত না, সেখানে এখন এক ঘন্টা পাম্প চালাতে তাদের মাত্র ২০ টাকা খরচ হচ্ছে। যার কারণে ব্যাপক উপকার পাচ্ছেন তাঁরা।
মজিফুলের বানানো পাম্পের সুনাম করতে দেখা গেল আরও এক প্রতিবেশী চাষী মোস্তফাকেও। তাঁর কথায়, যেখানে আগে পাম্প চালাতে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৫০ টাকা খরচ হতো সেখানে বর্তমানে অনেক কমে মিটে যাচ্ছে তা। সেই জন্য মজিফুলকে ধন্যবাদও জানাচ্ছেন তিনি।
বর্তমানে গোটা এলাকাবাসী অবাক এই ভেবেই যে, ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স না করেও কিভাবে কেবলমাত্র একা এইরকম একটা মেশিন বানিয়ে ফেললেন মজিফুল। মজিফুলের ইচ্ছে, এই রকম আরও অনেক পাম্প তৈরি করার, যাতে সেগুলো ব্যবহার করে আরও চাষীদের দৈনন্দিন জীবন সহজ বানাতে পারেন তিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন