সম্পদ দে : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী হওয়ার আশায় পৃথিবীর উচ্চতর থেকে উচ্চতম পাহাড়-পর্বতে অ্যাডভেঞ্চার করতে যান অনেকে। কে ২ থেকে শুরু করে এভারেস্ট কিংবা মাউন্ট ফুজি। প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ নিজেদের যাত্রা শুরু করেন একজন সফল পর্বতারোহী হওয়ার আশায়।
আর এই পর্বতারোহনের কারণে প্রতিবছর বিভিন্ন পাহাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে অনেকেরই। এই সবকিছুই কেবলমাত্র অ্যাডভেঞ্চার এবং শ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী হওয়ার আশায়। তবে এই সমস্ত আশায় জল ঢেলে যদি কাউকে বলা হয় যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পর্বতারোহী এক ধরনের ছাগল! চমকে গেলেন তো? চমকানোর মতোই খবর বটে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ। তবে এই মানুষকে কিংবা অন্য কোনও প্রাণীকে নয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী বলা হয় এক বিশেষ প্রজাতির ছাগলকে, যার নাম মাউন্টেন গোট। এ কোনও সাধারণ প্রজাতির ছাগল নয়, প্রায় প্রতিদিনই কেবলমাত্র খাবারের খোঁজে ১০ থেকে ১২ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে উঠে যায়, আবার নেমে আসে অবলীলায়!
এমনকি প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাঁড়া পাথুরে পাহাড়, যেখানে একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহীও চড়তে ভয় পান, সেখানে এই মাউন্টেন গোট উঠে যায় তরতরিয়ে। এই প্রজাতির ছাগলদের প্রধানত উত্তর আমেরিকার পার্বত্য এলাকায় দেখা যায়। তবে আফগানিস্তানের রুক্ষ পাহাড়ে কিংবা পার্বত্য হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলেও দেখা পাওয়া যায় এদের।
এই প্রজাতির একটি হৃষ্টপুষ্ট পরিণত ছাগলের ওজন হয়ে থাকে প্রায় ৫০ থেকে ১৪০ কেজি পর্যন্ত। আমাদের গ্রামবাংলায় দেখতে পাওয়া সাধারণ ছাগলদের থেকে আয়তনে অনেকটাই বড় হয় এরা। জন্মানোর সময়তেই এদের ওজন হয় প্রায় ৩ থেকে ৪ কেজির সমান।
একটি মাউন্টেন গোট জন্মানোর মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘন্টার ভেতরেই পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করে দেয়। আরও কিছুক্ষণ বাদে সফলভাবে ওঠাও শুরু করে। যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চলেই এদের বসবাস, সেই জন্য তীক্ষ্ণ শীত থেকে বাঁচতে এদের গায়ে থাকে পুরু পশম।
যেখানে আমরা, সাধারণ মানুষেরা অল্প শীত পড়লেই প্রায় কেঁপে উঠি, সেখানে এই মাউন্টেন গোটেরা মাইনাস ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দিব্বি হেঁটে–চলে বেড়ায়। উচ্চতা যত বাড়ে অক্সিজেনের পরিমাণও তত কমতে থাকে। তবে এটি কোনও সমস্যাই নয় তাদের কাছে। এমনকি ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগে পাহাড়ের হাড় কাঁপিয়ে দেওয়া ঠান্ডা বরফের ঝড় পর্যন্ত এদের সহজে নাড়াতে পারে না। এই ব্যাপক ঝোড়ো হওয়ার ধাক্কাও সামলে নিয়ে টিকে থাকতে পারে এরা।
অনেক ক্ষেত্রেই এইরকম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী জনজাতিরা এদের শিকার করে এদের থেকে পাওয়া মাংস এবং শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য এদের শরীরের মোটা পশমের পোষাক ব্যবহার করে। এদের সাধারন আয়ু হয়ে থাকে প্রায় ১৫ বছরের কাছাকাছি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাঁড়া পাহাড়ে ওঠা এবং নামার সময় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনায় এদের মৃত্যু হয়।
প্রায় খাঁড়া এবং এত উঁচু উঁচু পাহাড়ে এত অবলীলায় উঠতে পারার পেছনের রহস্য লুকিয়ে আছে এদের পায়ের খুর এবং শরীরের ভারসাম্যে। এদের পায়ের খুর এমনভাবে তৈরি যে, পাহাড়ের বিভিন্ন খাঁজে নিজেদের পাগুলোকে সঠিকভাবে আটকে এবং সেইসঙ্গে নিজেদের শরীরের সঠিক ভারসাম্য বজিয়ে রেখে তরতর করে উঠে যায় এরা।
পাহাড়ে ওঠার থেকেও নামাটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং সমস্যাজনক হওয়া সত্ত্বেও তাতে খুব একটা অসুবিধা হয় না এদের। আর ঠিক এইরকম বিভিন্ন কারণেই মানুষ এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও মানুষকে রীতিমত বাদ দিয়ে এই ছাগল বা মাউন্টেন গোটের প্রজাতিকেই প্রত্যেকে মেনে নিচ্ছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন