Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

‌সংসার বাঁচাতে বৌদিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত

Married-to-a-daughter-in-law

সম্পদ দে : ‌করোনা বা কোভিড-১৯ এর কথা উঠলে আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভয়ংকর এবং দুঃসহ দুটি বছর। এই দুই বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়েছে প্রচুর পরিবার। ছেড়ে চলে গেছে অনেক প্রাণ। প্রচুর বাবা-মা হারিয়েছেন তাদের সন্তানকে, আবার অনেক সন্তান হারিয়েছেন তাদের বাবা-মাকে। তেমন একটি ঘটনা উড়িষ্যার কটকের একটি পরিবারের।

এখন থেকে প্রায় ৭ বছর আগের ঘটনা। উড়িষ্যার কটকের রাগাড়ি গ্রামের একটি পরিবার। বাড়ির বড় ছেলে বিজয়ের সঙ্গে বৈদিক রীতি মেনে বিয়ে হয় লিলির। বিয়ের দু'বছরের মাথায় দুজনের একটি ফুটফুটে ছেলেও হয়। সুখে–শান্তিতে বেশ আনন্দেই কাটাচ্ছিল গোটা পরিবার। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন টিকলো না। 

করোনা কালের একদম প্রথম দিকেই আক্রান্ত হন বিজয়। প্রচুর লড়াই এবং বাঁচার অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জিততে পারলেন না বিজয়। করোনাতেই প্রয়াত হন তিনি। সুখের সংসারে হঠাৎ করে নেমে আসা ঝড়ে লিলি হারান তাঁর স্বামীকে।

দু বছর আগে ঘটা এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন লিলি। মাঝখানে এতগুলো মাস কেটে গেছে। শাশুড়ি, দেওর এবং গোটা পরিবার পাশে দাঁড়ালেও মানসিকভাবে নিজেদেরকে সামলে উঠতে পারছিলেন না লিলি এবং তাঁর পাঁচ বছরের সন্তান।

লিলির মানসিক অবস্থা দেখে অত্যন্ত কষ্টে ছিল গোটা পরিবার। মাঝখানে বহুবার লিলিকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে অন্য কোথাও বিয়ে করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তবে তাঁর শ্বশুরবাড়ি এবং পরিবার ছেড়ে যেতে রাজি হননি লিলি। চোখের সামনে এইভাবে তিল তিল করে গুমড়ে মরতে থাকা লিলির অবস্থা সহ্য করতে পারছিলেন না কেউ। 

শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবেচিন্তে এক অন্যরকম সিদ্ধান্ত নেন দেওর অরুণ। তিনি ঠিক করেন, অন্য কাউকে নয়, বৌদিকেই বিয়ে করবেন তিনি। অরুণ পরিবারের অনুমতি নেওয়ার জন্য সকলকে লিলির সঙ্গে বিয়ের কথা খুলে বললে খুশির হাওয়া বয়ে যায় পরিবারে। 

অবশেষে গোটা পরিবার এবং লিলির সম্মতি নিয়েই বিয়ে সেরে ফেলেন অরুণ। পরিবারের এক আত্মীয় বলেন, 'করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছিল বিজয়ের। তারপরে লিলির মানসিক অবস্থা দেখে তার দ্বিতীয় বিয়ের কথাও ভাবা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এই মহৎ কাজটি করে দেখান বিজয়ের ভাই অরুণ নিজে। তাঁর এই পদক্ষেপের দ্বারা গোটা সমাজে এক দুর্দান্ত বার্তা ছড়িয়ে পড়বে।' 

অরুণ নিজেও এই ক্ষেত্রে বলেন, 'দাদার মৃত্যুর পরে বৌদি এবং ভাইপো ভীষণ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিল। তাঁরা মানসিক দিক থেকে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ছিল। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মতো একজনের প্রয়োজন ছিল। সেই জন্যই আমার এইরকম ভাবনা এবং পদক্ষেপ।'

লিলিকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে বারবার দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব দিলেও সেই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চাননি তিনি। তাই যাতে এই পরিবারেই তিনি থাকতে পারেন এবং সেইসঙ্গে এই বিশাল মানসিক অবসাদ থেকেও মুক্তি পেতে পারেন, সেই জন্যই অরুনের এই মহৎ পদক্ষেপ। এই বিয়ের পরে আবারও খুশির আলো জ্বলে উঠেছে গোটা পরিবারে। সকলে মিলেই সুখে-শান্তিতে একসঙ্গে থাকার আশীর্বাদ করেছেন এই নবদম্পতিকে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন