সমকালীন প্রতিবেদন : আমাদের দেশ ভারতবর্ষে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই পবিত্র মনে করা হয়। এমনকি আমাদের পৌরাণিক শাস্ত্রেও উল্লেখ আছে, স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের জীবনই একে অপরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। এমনকি ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন রাজসূয় যজ্ঞ করতে বসেছিলেন, সেই সময় সীতাদেবী অনুপস্থিত থাকায় শ্রীরামচন্দ্র সীতাদেবীর একটি স্বর্ণমূর্তি নিজের পাশে স্থাপন করে সেই যজ্ঞ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।
আমাদের সংস্কৃতিতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র যে, ভোলেনাথকে মা পার্বতী ছাড়া ও শ্রীনারায়ণকে মালক্ষ্মী ছাড়া কল্পনাও করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ চিরকালই সাবিত্রীর দেশ ছিল, যিনি কিনা তার সত্যবানকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপদে কালের মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
তবে কেন আজকে হঠাৎ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে কথা হচ্ছে? কারণ, আজকে যার গল্পটি বলা হচ্ছে তিনি নিজেও একজন সাবিত্রীর থেকে কম কিছু নন। আজকের প্রতিবেদনটি যাকে নিয়ে, তিনি হচ্ছেন মহারাষ্ট্রের লাতুরের বাসিন্দা লতা খারে। দেশবাসী তাঁকে আখ্যা দিচ্ছেন 'সুপারওম্যান' নামে। তিনি তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে ৬৫ বছর বয়সে যেভাবে দৌড়েছেন, তাতে এই নাম তাঁর প্রাপ্য।
আজ্ঞে আক্ষরিক অর্থে দৌড় নয়, বাস্তবিকতার মাঠে ম্যারাথন দৌড়েই তিনি তাঁর স্বামীর জীবন রক্ষা করেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক লতা খারের ম্যারাথন দৌড়ের গল্পটি। মহারাষ্ট্রের একটি ছোট গ্রাম লাতুরের বাসিন্দা হচ্ছেন ৬৫ বছরের লতা খারে। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সংসার গৃহবধূ লতাজির।
কখনো কখনো অল্প স্বল্প অসুস্থ থাকেন তাঁর স্বামী। তবে একদিন স্বামীর অবস্থা হঠাৎই খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেন। হাসপাতাল বেশ অনেকটা দূরে থাকা সত্ত্বেও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোনওমতে হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। সেখানে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা রোগীর এমআরআই করার কথা বলেন।
তবে এমআরআই করানোর খরচ শুনে মাথায় হাত লতাজির। খরচ পড়বে ৫ হাজার টাকা! দরিদ্র বৃদ্ধা চিন্তায় পড়ে যান কোথায় পাবেন তিনি এত টাকা। ঠিক সেই সময়তেই কিছু লোকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, পাশের গ্রামেই এক ম্যারাথন প্রতিযোগিতা হচ্ছে। যা জিততে পারলে প্রথম পুরস্কার প্রায় ৫ হাজার টাকা।
ব্যাস! স্বামীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে নিজের বয়সের কথা আর চিন্তা করেননি তিনি। শেষ ভরসা হিসেবে অনুসরণ করেছিলেন সেই পরামর্শ। ম্যারাথনের কথা শোনামাত্রই তড়িঘড়ি তিনি সেখানে উপস্থিত হন নিজের নাম লেখানোর জন্য।
প্রথম প্রথম সমস্ত প্রতিযোগী থেকে গ্রামবাসীরা বেশ অবাক হয়েছিলেন ৬৫ বছর বয়সী এক মহিলাকে ম্যারাথনে নাম লেখাতে দেখে। তবে এই সমস্ত দিকে কোনও তাপ-উত্তাপ ছিল না লতাজির। এই ম্যারাথন অন্য সকলের জন্য একটি প্রতিযোগিতা হতে পারে মাত্র, তবে লতাজির কাছে এটি ছিল তার স্বামীকে সুস্থ করে তোলার শেষ উপায়।
যথারীতি সময়মতো শুরু হয় ম্যারাথন দৌড়। কম বয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে অনেকেই নাম লিখিয়েছিলেন সেই দৌড়ে। সবার মনেই জিজ্ঞাসা ছিল, কিভাবে একজন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ৩ কিলোমিটারের একটি ম্যারাথন জিততে পারবেন। তবে বলে না, 'পরিস্থিতি সকলকে লড়তে শিখিয়ে দেয়'। ঠিক তেমনটাই হয়েছে লতা খারের সঙ্গে।
সবার মনের সেই জিজ্ঞাসাকে পেছনে ফেলে খালি পায়ে দৌড়ে সবাইকে চমকে দিয়ে ম্যারাথন জিতে দেখান তিনি। লতাজির এই সাহস এবং জিতকে সকলেই অভিবাদন জানিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর এই ঘটনাকে এবং তাঁকে নিয়ে একটি মারাঠি চলচ্চিত্রেরও নির্মাণ হয়েছে যার নাম, 'লতা ভগবান খারে'।
তবে ম্যারাথন দৌড়ে প্রথম হওয়া বা তাঁকে নিয়ে সিনেমা তৈরি হওয়ায় তিনি যত না আনন্দ পেয়েছেন, তার থেকে তিনি অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছেন তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে পেরে। এই জন্যই বারবার বলা হয় স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্ক এক পবিত্র বন্ধন। পৃথিবীর সমস্ত কোণাতেই স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে এক অটুট বন্ধন থাকলেও, এমন ভালোবাসা এবং পবিত্রতা হয়তো কেবলমাত্র আমাদের দেশ ভারতবর্ষেই দেখতে পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন