শম্পা গুপ্ত : বিচারাধীন বন্দির মৃত্যুর ঘটনায় এক পুলিশ আধিকারিককে দোষী সাব্যস্ত করে ৮ বছরের কারাদন্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক। ২৫ বছর বিচার চলার পর সোমবার এই মামলার রায় ঘোষনা করলেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক– ২) জাহাঙ্গীর কবীর।
জানা গেছে, পুরুলিয়ার বরাবাজার থানা এলাকার বাসিন্দা বুধন শবরকে ১৯৯৮ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় বরাবাজার থানার পুলিশ। ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে তোলা হয়।
এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি সংশোধনাগার থেকে বুধনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে, ওই সময় একদিনের জন্য বুধনকে বরাবাজার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর তখন তার উপর অত্যাচার করা হয়েছিল। আর সেই কারণেই সে আত্মহত্যা করে।
এই ঘটনায় সেইসময় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। শবরদের নিয়ে কাজ করা সাহিত্যিক তথা সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবী পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলে ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেন। এরপর আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়।
সেই মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ২৪ ফেব্রুয়ারি বুধন শবরের দেহ কবর থেকে তুলে ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ময়নাতদন্ত হয়। পাশাপাশি, কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলার তদন্তভার দেয় সিবিআইকে। তদন্তের পর সিবিআই আদালতে চার্জশিট জমা করে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মামলা চলার পর এদিন সেই মামলার রায়দান হল।
বুধন শবরের এই অকাল মৃত্যুর জন্য পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অশোক রায়কে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে ৮ বছর কারাদণ্ড, সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিলেন বিচারক।
এর পাশাপাশি, পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় পুলিশের অত্যাচারের ঘটনায় ৫ বছর কারাদণ্ড, সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। দুটি সাজা একইসঙ্গে চলবে। এই মামলার রায় শুনতে এদিন আদালত চত্ত্বরে হাজির ছিলেন বুধনের পরিবারের সদস্য এবং খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির সদস্যরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন