সমকালীন প্রতিবেদন : বর্তমানে পৃথিবীতে এমন বিভিন্ন রোগ রয়েছে, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। ফ্যাটিলিভার থেকে শুরু করে অত্যন্ত ওজন বৃদ্ধি, বিভিন্ন রোগ ধীরে ধীরে জাপটে ধরছে মানুষের শরীরকে। আর এই ধরনের রোগগুলোর মধ্যেই একটি অন্যতম বিপদজনক রোগ ডায়াবেটিস।
গোটা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে ডায়াবেটিস যেহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে প্রত্যেককে। তবে অন্য সকলের থেকে সবথেকে বেশি সতর্ক থাকা দরকার আমাদের ভারতীয়দের। কারণ, বর্তমানে পৃথিবীর ডায়াবেটিসের এপিসেন্টার ভারত। ভারতকে বলা হয়ে থাকে ডায়াবেটিস ক্যাপিটাল অফ দা ওয়ার্ল্ড।
এত বছর পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে বেশি ডায়াবেটিক পেশেন্টের বাস ছিল পৃথিবীর সবথেকে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনে। তবে চীন তাদের সেই ডায়াবেটিস সমস্যাটিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে ভারতে কিন্তু এখনও পর্যন্ত বেড়েই চলেছে এইদিক থেকে। ফলে খুব দ্রুতই পৃথিবীর সর্বাধিক ডায়াবেটিক পেশেন্টদের বাস হয়ে উঠবে আমাদের ভারতবর্ষে।
সেই জন্যই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সকলকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। তবে অনেকেরই এই নিয়ে চিন্তা থাকে যে, তারা কিভাবে দামি দামি ওষুধ এবং চিকিৎসার খরচ জোগাড় করবেন। তাদের জন্যই আজকে আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদন।
আমাদের ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এমন বেশ কিছু সমাধান বলা আছে, যা কিনা কেবলমাত্র ঘরোয়া উপাদানের সাহায্যেই খুব সহজে পাওয়া সম্ভব। আজকে আমরা জেনে নেব, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সেই ঘরোয়া টোটকাগুলি সম্বন্ধেই।
১| ইনসুলিন প্ল্যান্ট- ডায়াবেটিক পেশেন্টদের কাছে ওষুধের সমান কার্যকরী এই ইনসুলিন প্ল্যান্ট। একটি মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাধার কারণ হলো শরীরে তৈরি হওয়া ইনসুলিন নামক এক হরমোনের ঘাটতি। এই হরমোনের কাজ হলো, রক্তে শর্করাকে ভেঙে তা শক্তিতে রূপান্তরিত করা।
তবে শরীরে এই ইনসুলিন কম নিঃসৃত হওয়ার কারণে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দেখা দেয় ডায়াবেটিসের সমস্যা। তবে ইনসুলিন প্ল্যান্টের পাতা শরীরের এই হরমোনের ঘাটতিকে পূরণ করতে পারে। NCBI- এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে এই গাছের পাতা খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যায়। এই গাছের পাতা একজন ডায়াবেটিস পেশেন্ট চিবিয়ে অথবা ফুটিয়ে তার রস করে খেলে বেশ উপকার পাবেন।
২| পেয়ারা পাতা- NCBI-তে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পেয়ারা পাতার রস আলফা-গ্লুকোসিডেসের ক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। যার কারণে রক্তের শর্করার মাত্রা বেশ কম থাকে। একজন ডায়াবেটিক পেশেন্ট পেয়ারা পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে তা গরম জলে সেদ্ধ করে চায়ের মতো অল্প অল্প করে পান করতে পারেন। এর দ্বারা বেশ ভালো উপকারিতা পাবেন সে।
৩| আম পাতা- অনেকেই আম পাতা দেখে অবাক হতে পারেন। তবে আমের পাতাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী। আমের পাতায় থাকা এনজাইম ম্যাঙ্গিফেরিন নামক উপাদান শরীরের আলফা-গ্লুকোসিডেস প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমের পাতায় থাকে ভিটামিন সি, পেকটিন এবং প্রচুর ফাইবার। এইগুলি যেরকম ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তেমনি সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি, খাবার হজম করে অন্ত্রের সমস্যাও কম করে।
৪| কারি পাতা- ভারতীয় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য কারি পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, কেবলমাত্র খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্যই নয়, বরং শরীরে শর্করার মাত্রা কম করতেও সাহায্য করে কারি পাতা। কারি পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা কিনা শরীরের হজম শক্তিকে বেশ উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যকেও দূরে রাখে। সেই সঙ্গে কারি পাতা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে। যার কারণে রক্তে থাকা অতিরিক্ত শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫| তুলসী পাতা- তালিকার শেষ তবে অন্যতম সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এই তুলসী পাতা। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের সবথেকে শক্তিশালী ঔষধ হিসেবে পরিচিত এই তুলসী। ধর্মীয় গুরুত্বের সাথে সাথেই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যাপারেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই গাছের পাতা। এই গাছের পাতা ভরপুর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যে।
বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক থেকে মারাত্মকতম রোগ, জীবাণু এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আছে তুলসী গাছের। ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তুলসীকে অবশ্যই রাখতে হবে নিজেদের এই তালিকায়। তুলসী পাতায় থাকা রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই রোজ সকালবেলায় এক কাপ জলের মধ্যে কয়েকটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে চায়ের মতো করে খেলে প্রচুর উপকার পাওয়া সম্ভব।
আজকের থেকেই প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগী এই ঘরোয়া টোটকাগুলি ব্যবহার করে নিজেদের ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। এছাড়াও, যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা নেই, তারাও নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন এবং চেষ্টা করুন ডায়াবেটিস থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার। কারণ, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যার কোনও সম্পূর্ণ নিরাময় নেই।
একবার শরীরে দেখা দিলে সারা জীবন একে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অত্যন্ত প্রচলিত একটি রোগ হয়ে দাঁড়ালেও ডায়াবেটিস এতই ক্ষতিকারক যে, শরীরে একবার মারাত্মক রূপ নিয়ে নিলে ধীরে ধীরে প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি শুরু করে। হার্ট, লিভার, কিডনি, চোখ সমস্ত কিছুতেই প্রভাব ফেলে এটি।
এমনকি সময় থাকতে শরীর সম্পর্কে সচেতন না হলে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে শরীরের কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়ার কারণে মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই ভবিষ্যতের এই বিপদ এড়াতে আজ থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী বিভিন্ন পরামর্শ মেনে শরীরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং আপনার আশপাশের সকলকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন