সমকালীন প্রতিবেদন : আমাদের ভারতবর্ষ এমন একটি দেশ, যার সংস্কৃতি এবং খাবারদাবাদের গল্প দেশ-বিদেশে প্রচলিত। ভারতীয় খাবার সম্পর্কে কাউকে জিজ্ঞেস করলে প্রতি তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনের পছন্দের জিনিস বাটার নান বা তন্দুরি রুটি। সেই সঙ্গে পাশে চাই পনির কাবাব কিংবা তন্দুরি চিকেন।
তবে দুঃখের বিষয় মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দাদের জন্য। কারণ, এখন থেকে তন্দুর জাতীয় খাবার তৈরি করা যাবে না কোনও হোটেলে। তন্দুর জাতীয় খাবার কার না পছন্দ। একটি উনুনে প্রথমে কাঠ এবং কয়লা ভালো মতো জ্বালানোর পরে সেই তাপে যেকোনও তন্দুরি খাবার রান্না করা হয়ে থাকে।
আর সমস্যা এসে দাঁড়িয়েছে ঠিক সেখানেই। তন্দুরে ব্যবহার করা কাঠ এবং কয়লা থেকে উৎপন্ন ধোঁয়ায় নাকি পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। সেই জন্যই পরিবেশবিদদের অনুরোধে মধ্যপ্রদেশের একাধিক শহরে তন্দুর জাতীয় সমস্ত খাবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে তন্দুরি খাবার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পরিবেশবিদ এবং প্রশাসনের এই নির্দেশ শুনে বেশ হতবাক হোটেল মালিক থেকে গ্রাহক সকলেই। তাঁদের মতে, তন্দুরি খাবারের নিষেধাজ্ঞার পেছনে থাকা এই কারণ অত্যন্ত অযৌক্তিক।
তবে সেই দিকে কান দিচ্ছে না প্রশাসন। বরং কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তাকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও দিতে হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে কেবলমাত্র জব্বলপুরে তন্দুরি খাবারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও পরে তা ভোপাল, ইন্দোর এবং গোয়ালিয়রের মতো শহরগুলিতেও জারি করা হয় এই নিষেধাজ্ঞা।
তবে এই নির্দেশের কারণে বেশ সমস্যায় পড়েছেন সমস্ত হোটেল এবং ধাবার মালিকেরা। তন্দুরি খাবার বন্ধ করে দেওয়ায় নিজেদের খাবারের তালিকা থেকে অনেক খাবার বাদ দিতে হয়েছে। ফলে কাস্টমার এবং ব্যবসা– দুটোই বেশ কমে গেছে বলে তাঁদের দাবি।
পরিবেশবিদদের দাবি, বিভিন্ন হোটেল এবং ধাবার তন্দুর থেকে উৎপন্ন ধোঁয়ায় তৈরি হওয়া বায়ু দূষণের কারণে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা এমনকি অ্যাজমার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ সরকার বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে বেশ কড়া প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই জন্যেই রাজ্যের সমস্ত হোটেল এবং ধাবায় পাঠানো নোটিশের মাধ্যমেই তাঁরা তাঁদের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে এই সমস্যার মাঝেও এক আশার আলো রয়েছে ভোজন রসিক মানুষ, হোটেল এবং ধাবার মালিকদের জন্য। তন্দুরি খাবার বানানোর জন্য কয়লা এবং কাঠ ব্যবহার না করা গেলেও তার পরিবর্তে ইলেকট্রিক ওভেন অথবা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারবেন তাঁরা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সমস্ত হোটেল মালিকেরা তন্দুরি খাবার বানাতে চান, তাঁদেরকে ইলেকট্রিক ওভেন এবং এলপিজির ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এইভাবে তৈরি করা তন্দুরি খাবারের ক্ষেত্রে তার প্রকৃত স্বাদের সঙ্গে বেশ কিছুটা আপস করতে হতে পারে।
তবুও বলা হয়ে থাকে, 'নেই মামার থেকে কানা মামা ভালো'। তাই কাস্টমার এবং হোটেল মালিকদেরকে স্বাদের সঙ্গে একটু আপস করে চলতেই হবে। কারণ, বর্তমানে তন্দুরি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে হলে এখন থেকে এই নিষেধাজ্ঞা মেনেই চলতে হবে মধ্যপ্রদেশের ধাবা এবং হোটেল ব্যবসায়ীদের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন