যেখানে আশিতেও চিরযুবতী
অজয় মজুমদার
'ও কেন এত সুন্দরী হলো, এমনি করে ফিরে তাকালো, দেখে তো আমি মুগ্ধ হবোই, আমি তো মানুষ'। চারিদিকে ৬০-৬৫ বছরের যুবতীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ৩০/৩৫ এর মতো যুবতী হয়ে৷ এই রহস্য উদঘাটনে বেরিয়ে পড়তে হলে যেতে হবে পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালার কাছে হানজা উপত্যকায়। যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হানজা সম্প্রদায়৷ এরা খুবই সুসংগঠিত এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি জনগোষ্ঠী। এখানকার জনসংখ্যা ৮৭ হাজার৷ গড় আয়ু ১৫০ বছর৷
শতবর্ষ পার করার পরেও এখানে দিব্যি সুস্থ, সবল তরতাজা৷ ওই এলাকায় আশি বছরের বৃদ্ধাকেও ৩০-৩৫ বলে চালিয়ে দেওয়া যায়৷ ৬০ বছরে মা হওয়াটা এখানে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ফুটফুটে সন্তানের বাবা ৯০ বছরের মানুষ৷ যে কোনও ৬০-৭০ বছরের যুবতীর প্রেমে পড়ে যেতে পারে ২৫-৩০ এর যুবকেরা। হামজা জনগোষ্ঠীর যুবক, যুবতীরা খুবই দর্শনধারী৷ একটা কথা প্রচলিত আছে যে, কাশ্মীরের নারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুন্দরী৷ কিন্তু হানজা নারীদের দেখলে কনফিউশনে পড়ে যেতে হবে। কারা বেশি সুন্দরী!
হানজা মেয়েরা খুবই লাজুক৷ সহজে অপরিচিত পুরুষ বা ক্যামেরার সামনে আসতে চান না৷ হানজাদের মধ্যে শিক্ষার হার ৯০%৷ এই অঞ্চলের ৯৫ ভাগ জনগণই মুসলিম। তারা সব ধরনের ইসলামী রীতি নীতি মেনে জীবন চালান৷ বিভিন্ন উৎসবে এরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নাচ গান করেন৷ এই অঞ্চলের প্রধান উৎসব হল ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আজহা, ঈদ-উল মিনাদুন্নবির মত ইসলামিক উৎসব৷
এদের এই সুস্থ ও সুন্দর এবং চির যৌবনের রহস্য উদঘাটন করাটা ভীষণ প্রয়োজন। হানজা সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের উৎপাদিত ফসল খান। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পর পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে সারা বছরের জন্য খাদ্যদ্রব্য মজুত করে রাখা হয়। তারা ফসল ফলানোর জন্য কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না৷
এদের দীর্ঘায়ুর রহস্য হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রকৃতির বুকে এক টুকরো স্বর্গ। বিশাল বিশাল আকাশ ছোঁয়া পর্বতের মাঝে চোখ জুড়ানো সুন্দর উপত্যকা। তার মাঝে ছোট ছোট গ্রাম৷ এখানকার লেকের জল অবিশ্বাস্য সুন্দর রঙিন৷ মনে হবে কৃত্তিম ভাবে করা। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য করা হয়েছে। আসলে সম্পূর্ণটাই প্রাকৃতিক৷
এই হানজা সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়মিত শ্বাসক্রিয়ার ব্যায়াম করেন৷ এতে এদের চর্ম এবং শরীর নানাভাবে উপকৃত হয়। তাদের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের আরেকটি কারণ হলো, যোগব্যায়াম। দিনের কাজ শুরুর আগে সকালে তারা কমপক্ষে তিন ঘন্টা যোগ ব্যায়াম করেন।
ওই এলাকা জুড়ে আরও অনেক সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস, যাদের আয়ু শত বছরের উপরে। এক কথায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলটাই রহস্যে মোড়া একটা দ্বীপের মত। কোনও সমস্যাই তাদের জীবনকে ছুঁতে পারেনি। পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান হলো গিলগিট, বালটিন্তান, খাইবার পাখতুন ইত্যাদি।
হানজা উপত্যকা পাকিস্তানের বড় শহরগুলির চেয়েও অনেক নিরাপদ৷ লাহোর বা করাচিতে হয়তো পকেটমার বা ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হতে পারে। কিন্তু এই উপত্যকায় এখানে এইরকম কোন ভয় নেই। আপনি নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করে আসতে পারেন।
এই অঞ্চলে ৬০০০/ ৭০০০ মিটার উচ্চতায় কিছু পাহাড় আছে। তাই সারা বছরই এখানে পর্বত আরোহীদের আনাগোনা চোখে পড়ে৷ পাশাপাশি, বহু বিদেশী পর্যটকেরা হানজা উপত্যকায় ভ্রমণে আসেন। ভ্রমণ পিপাসুরা জীবনে একবার অন্তত পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালায় ঘেরা ভূস্বর্গটি দেখে আসুন।
এটাই হয়তো সেই কাল্পনিক স্বর্গ৷ এখানকার প্রকৃতির রূপে মোহিত হয়েই হয়তো স্বর্গের কাল্পনিক কনসেপ্টটা মানুষের মনে এসেছিল। হিন্দু ধর্মের দেবদেবীদের যেমন বয়স বাড়ে না, এখানকার মেয়েদেরও তেমনি চিরযৌবনা পরীর মত ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
যদি ভ্রমণ করতে যেতে চান, তাহলে এই পথে যেতে পারেন। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ছাদ খোলা জিপ৷ সেটি ভাড়া নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সড়ক কারাকোরাম হাইওয়েতে' ২৪ ঘন্টা ড্রাইভ করতে হবে। আর তারপর পৌঁছে যাওয়া যাবে হানজা উপত্যাকায়৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন