সমকালীন প্রতিবেদন : ব্যবসায়ী এবং তার ভাইকে কুপিয়ে জখম করে পালানোর সময় ক্ষিপ্ত জনতার হাতে ধরা পরে গণপিটুনিতে মৃত্যু হল এক দুষ্কৃতীর। মঙ্গলবার ভরসন্ধেয় উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার ঠাকুরনগর বাজারের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরনগর রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় একটি ফলের দোকান রয়েছে মনোরঞ্জন মজুমদার নামে এক ব্যবসায়ীর। মঙ্গলবার সন্ধের পর স্থানীয় ক্লাবে সরস্বতী পুজোর মিটিং এ যোগ দেওয়ার জন্য দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মনোরঞ্জনবাবু।
এই সময় হঠাৎ করে পার্থ সমাদ্দার (৩০) নামে এক দুষ্কৃতী তার ৫ জন সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে হাজির হয়। প্রত্যেকের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পার্থ তার হাতের ধারালো অস্ত্র দিয়ে মনোরঞ্জনকে এলোপাথারি কোপ দিতে থাকে। অস্ত্রের কোপ তাঁর মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগে।
এই দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা ছুটে এলে পার্থ এবং তার সঙ্গীরা স্থানীয়দের অস্ত্র নিয়ে তাড়া করে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন মনোরঞ্জনের ভাই সুরঞ্জন মজুমদার। তিনি দুহাতে দুই দুষ্কৃতীকে ধরে তাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অন্যরা তাকে লক্ষ্য করেও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ফলে তিনিও জখম হন।
ইতিমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বহু মানুষ এলাকায় জড়ো হয়ে যান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পার্থ এবং তার সঙ্গীরা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা পার্থকে ধরে ফেলেন। এরপর শুরু হয় ক্ষিপ্ত জনতার গণপিটুনি। আর তাতেই মারাত্মকভাবে জখম হয় মূল দুষ্কৃতী পার্থ।
ইতিমধ্যেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় গাইঘাটা থানার পুলিশ। তাঁরা পার্থকে উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে ঠাকুরনগর গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তার পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গভীর রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, দুষ্কৃতীদের হামলায় জখম ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন এবং তাঁর ভাই সুরঞ্জন মজুমদারকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঠাকুরনগর গ্রামীন হাসপাতালে পাঠান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদেরকেও বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুষ্কৃতী পার্থ সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ২০১৫ সাল থেকে একাধিক দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। গাইঘাটা এলাকায় তার নিজস্ব কোনও আস্তানা নেই। মাঝেমধ্যেই সে ঠাকুরনগর এলাকায় মামার বাড়িতে আশ্রয় নিত। আর সেখান থেকেই তোলাবাজি সহ বিভিন্ন দুষ্কর্ম করতো।
বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাতে মারধোর খেয়ে এলাকাছাড়া ছিল। এরপর মঙ্গলবার সন্ধেয় সশস্ত্র সঙ্গীদের নিয়ে সে মনোরঞ্জনের উপর হামলা চালায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, বেশ কিছুদিন আগে পার্থকে সে ব্যবসায়ীরা মারধোর করেছিল, তার শোধ নিতেই এদিন সে হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি, গণপিটুনিতে পার্থর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে, ব্যবসায়ী এবং তাঁর ভাইকে কোপানোর অভিযোগে তন্ময় ঘোষাল নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পার্থ কোন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থাকতো, তা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে আঙুল তুললেও পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন