নেতাজীর ছাত্রজীবন
স্বপন ঘোষ
১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে সুভাষচন্দ্রের জন্ম। বাবা জানকীনাথ বসু জন্মেছিলেন কলকাতার অনতিদূর কোদালিয়া গ্রামে। মা প্রভাবতী ছিলেন কলকাতার হাটখোলা দত্ত বাড়ির মেয়ে। ১৮৭৯ সালে উনিশ বছর বয়সে জানকীনাথ ভাগ্যান্বেষণে কটকে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই আইনজীবীরূপে জানকীনাথ সার্বিক প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সুভাষচন্দ্র পরে তাঁর পিতার সাফল্য সম্পর্কে লিখেছিলেন যে, জানকীনাথের সাফল্য প্রমাণ করে সাহসী ব্যক্তিদের প্রতিই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়।
জানকীনাথ কটকে কেবল আইনজীবী হিসাবেই সফল হন নি। ১৯০১ সালে তিনি কটক মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কয়েক বছর পর সরকারি উকিল এবং পাবলিক প্রসিকিউটরের পদ পান। ১৯১২ সালে আইনসভার সদস্য হন এবং 'রায়বাহাদুর' খেতাব পান। এই পদোন্নতি এবং খেতাবের পিছনে নিশ্চিতভাবেই ছিল রাজানুকূল্য। ১৯১৭ সালে তিনি অবশ্য উভয় সরকারিপদেই ইস্তফা দেন। ১৯৩০ সালে সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে তিনি 'রায়বাহাদুর' খেতাব বর্জন করেন। জানকীনাথের জীবনধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির এক মিশ্রণ ঘটেছিল। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে, ব্রিটিশ উদারনীতি এবং সাহেবি সাজপোশাক পছন্দ করতেন।
অন্যদিকে তিনি ভারতীয়, হিন্দু ও বাঙালি বলে গর্ববোধ করতেন। ইংরেজ শাসনের সুফল সম্পর্কে তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের অনুরাগী ছিলেন। প্রভাবতী দেবী বাংলা ও ইংরেজি পড়তে, লিখতে পারতেন। তিনি কঠোর নিয়মশৃঙ্খলায় বিশ্বাস করতেন। তাঁর বাস্তবতাবোধ ও বিচারবুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ। বাড়ির এবং পারিবারিক পরিবেশ, বাবা–মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মানসিকতা এবং তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক সুভাষচন্দ্রের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
সুভাষ তাঁর আত্মজীবনীতে পরে লিখেছিলেন, পারিবারিক পরিবেশের জন্যে তাঁর মধ্যে স্বার্থপরতা বা লোভের প্রবৃত্তি জন্মায়নি। পরিবার এবং বাবা-মায়ের সাহচর্য ও শিক্ষার ফলেই সুভাষচন্দ্রের মনে কোনও সংকীর্ণতা, প্রাদেশিকতা জন্মায়নি। 'পিতা-মাতাকে মান্য ও সন্তুষ্ট করা উচিত,' 'পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম,' 'মাতা স্বর্গের চেয়েও গরীয়সী' ইত্যাদি আপ্তবাক্য, উপদেশ তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু একই সঙ্গে কিশোর সুভাষের এক বিদ্রোহী মন ছিল। নিজের আদর্শ ও মানবসেবার ব্রত কার্যকর করতে তিনি স্থির প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
সুভাষচন্দ্রের ছাত্রজীবন, সেই কটকের মিশনারি স্কুল থেকে শুরু করে কেমব্রিজে 'মানসিক ও নীতিবিজ্ঞান' বিভাগে 'ট্রাইপোজ' এর জন্যে পড়াশোনা করা পর্যন্ত ছিল ঘটনাবহুল এবং চমকপ্রদ। পাঁচ বছর বয়সে (১৯০২) সুভাষচন্দ্র কটকের প্রটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুলে ভর্তি হন। সুভাষের অন্য সব ভাই-বোনেরাও এই স্কুলে পড়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল ভাল করে ইংরেজি শেখানো। এছাড়াও, ভাল আচার-আচরণ, পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হতো ওই স্কুলে। তবে স্কুলে শ্বেতাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব সুভাষের পছন্দ হতো না।
১৯০৯ সালে সুভাষ পি ই স্কুল ছেড়ে কটকের রাভেন শ' কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৩ সালে ওই স্কুল থেকেই প্রবেশিকা (ম্যাট্রিক) পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পাশ করেন। এই ক'বছর তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কৈশোরের প্রথম অভিজ্ঞতা, অনুভূতি এবং ঘটনাগুলি তাঁর প্রকৃতি ও চরিত্রকে গড়ে তুলেছিল। রাভেন শ' স্কুলে ভাল ছাত্র হিসাবে সুভাষ বিশেষ পরিচিতি পান। এতে তাঁর আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল। তবে ইংরেজি স্কুলে পড়ায় তাঁর বাংলা জ্ঞান ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এই নিয়ে ক্লাশের ছেলেরা হাসাহাসি, বিদ্রুপ করত। কিন্তু এইসব বিদ্রুপ, অপমানের জবাব দিতে তিনি গোপনে বাংলা শেখায় মন দেন। তারপর বার্ষিক পরীক্ষায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি বাংলাতে সর্বোচ্চ নম্বর পান। এই জিদ ও আত্মবিশ্বাস ছিল সুভাষের চরিত্রের এক বৈশিষ্ট্য।
রাভেন শ' স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বেণীমাধব দাস। প্রথম দেখার দিন থেকেই বেণীমাধববাবু সুভাষচন্দ্রকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব, আদর্শ-নিষ্ঠ চরিত্র, নৈতিক মূল্যবোধ কিশোর সুভাষচন্দ্রের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁকে তিনি কোনওদিন ভুলতে পারেননি। তাঁর কাছ থেকেই শিখেছিলেন আত্মমর্যাদাবোধ, প্রকৃতি প্রেম ও সৌন্দর্য বিচার। ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্য ও ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণ ও শ্রদ্ধাশীলতা তিনি তাঁর কাছ থেকেই শিখেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস সুভাষচন্দ্র অতি যত্নের সঙ্গে পড়েছিলেন। স্কুলজীবনেই সুভাষের মনন ও চিন্তায় স্বদেশ ও আধ্যাত্মচেতনা, দেশপ্রেম ও ঈশ্বর প্রেমের এক অপূর্ব ও বিচিত্র সমন্বয় ঘটেছিল। মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালবাসা, মাতৃভূমিকে জানা ও আবিষ্কারের ইচ্ছা তাঁর মধ্যে প্রবলভাবে দেখা দিয়েছিল। ১৯১১ সালের ১১ আগস্ট শহীদ ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের দিন ছাত্রদের গণ-অনশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র।
রাভেন শ' স্কুলে পড়ার সময়ই সুভাষচন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে গভীর আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হতে শুরু করেন। তাঁর সমগ্র জীবনে এঁদের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর ও সুদূরপ্রসারী। কলকাতায় কলেজ জীবন শুরু হলে এই প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯১৪ সালে। সুভাষ ও তাঁর কয়েকজন সহপাঠী শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন কবিকে দর্শন করতে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁদের শুধু দেখাই হয়নি, রবীন্দ্রনাথ গ্রামের পুনর্গঠন সম্পর্কে তাঁদের কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনের পরিবেশ, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ সুভাষচন্দ্রের মনকে বিশেষ প্রভাবিত করেছিল।
সুভাষচন্দ্রের জীবনের মর্মবাণী ছিল মানবপ্রেম। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানব সভ্যতার কোনও পর্যায়কেই চূড়ান্ত বা শেষ সোপান বলা যায় না। মানুষের ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। স্বাধীনতার মূল্য অপরিসীম। নিজের বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করলে মানুষ অমরত্ব লাভ করে। সমাজ পুনর্গঠনের মূল ভিত্তি হল ব্যক্তির স্বাধীনতা। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ হল দাসত্ব, বন্ধনদশা ও অন্যায় অবিচারের সঙ্গে আপস করা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবনপণ সংগ্রামই হল শ্রেষ্ঠ পুণ্য। আত্মত্যাগ জীবনের পরমধর্ম। মানুষের মর্যাদা ও পূর্ণ স্বাধীনতার আছে চারটি স্তম্ভ : বিবেকের মুক্তি, রাষ্ট্রিক স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক গণতন্ত্র বা সমাজবাদ এবং মানুষের মর্যাদা। এই চারটি হল সর্বকালের, সর্বমানবের জীবনের লক্ষ্য ও অধিকার। কম বয়সে সুভাষের এই মানবিক শিক্ষার পথ ধরেই পরবর্তিকালে বিকাশলাভ ঘটেছিল 'সুভাষবাদ' এর।
১৯১৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হবার পর সুভাষ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তখন তাঁর বয়স ষোল বছর। কটকের শৈশব, কৈশোরের পরিবেশ ও দিনগুলির সঙ্গে কলকাতার তফাৎ প্রায় আকাশ-জমিন। সুভাষের মনের মধ্যে তখন এক ঝড় চলছে। তিনি স্থির করে ফেলেছেন যে, গতানুগতিক পথে চলবেন না। আধ্যাত্মিক কল্যাণ ও মানব-কল্যাণ তাঁর আদর্শ। দর্শন নিয়ে পড়াশোনা আর 'যতটা সম্ভব' রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দকে অনুসরণ করা তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু জীবনের বাস্তব সমস্যা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রায় কিছুই হয়নি। কলেজজীবনে সুভাষচন্দ্র যেসব মনীষী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন তাদের মধ্যে ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ।
অরবিন্দ সম্পাদিত 'আর্য' পত্রিকার দেশাত্মবোধক ও আধ্যাত্মিক রচনা সুভাষকে বিশেষ নাড়া দেয়। চরমপন্থী নেতা বাল গঙ্গাধর তিলককেও তিনি বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন। ১৯১৫ সালে কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর বক্তৃতা সুভাষকে স্বাদেশিকতা ও বিজ্ঞানচেতনার সমন্বয়সাধনে প্রবুদ্ধ করেছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়াশোনা সুভাষের ভাল লাগছিল না।
১৯১৪ সালে গরমের ছুটির সময় তিনি ও তাঁর এক বন্ধু গোপনে তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। মন বড় অস্থির। তীর্থযাত্রা, গুরুর সন্ধান ও ভারত পরিভ্রমণের ধরলে বাড়ি ফিরে তিনি টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তীব্র অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় তাঁর ফল বেশ হতাশজনক হয়। সুভাষের মনে অনুশোচনা আসে। শেষে তিনি মনস্থির করেন, দর্শন-এ অনার্স নিয়ে বি.এ. পড়বেন এবং ভাল ফল করবেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন ইএফ ওটেন। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করতেন। ১৯১৫ সালে ইডেন হিন্দু হস্টেলে এক বক্তৃতায় ওটেন বলেছিলেন যে, গ্রীকরা যেমন এক সময় যেসব অসভ্যজাতি তাদের সংস্পর্শে এসেছিল তাদের সভ্য করে তুলেছিল, তেমনি ভারতবর্ষে ইংরেজদের লক্ষ্য হল, ভারতীয়দের সভ্য করে তোলা। স্বভাবতই এই বক্তব্য ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিল। এর পরের ঘটনা ঘটল ১০ জানুয়ারি ১৯১৬।
ওইদিন ওটেন তাঁর ঘরের সামনের বারান্দায় কলেজের কয়েকজন ছাত্রকে গোলমাল করার অভিযোগে অপমান করেন এবং কিছু বাদানুবাদের পর তিনি তাদের শারিরীকভাবে লাঞ্ছনাও করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা কলেজের অধ্যক্ষ এইচআর জেমসের কাছে প্রতিবাদ করে কোনও ফল না হওয়ায় কলেজে ছাত্র ধর্মঘট হয়। শেষপর্যন্ত দুদিন ধর্মঘট চলার পর ওটেন ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে তখনকার মত সমস্যা মিটলেও এর রেশ রয়ে যায়। কলেজ ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। 'লেখাপড়ায় ভাল কিন্তু গণ্ডগোল পাকানো ছেলে' বলে সুভাষ কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরূপ নজরে পড়েন।
এরপর বিস্ফোরণ ঘটল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬। আবার সেই ওটেন কলেজের কয়েকজন ছাত্রকে নিগ্রহ করে বসলেন। এবার ছাত্ররা ঠিক করলেন, ওটেনকে 'শিক্ষা' দিতে হবে। ছাত্ররা ওটেনকে ধরে শারিরীক নিগ্রহ করল। কলেজে দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি হল। সরকারি আদেশে কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হল। কলেজ অধ্যক্ষ ছাত্রদের ডেকে পাঠালেন এবং সুভাষচন্দ্রকে লক্ষ্য করে বললেন, 'বোস, তুমিই হচ্ছ কলেজের সব নষ্টের গোড়া। আমি তোমাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দিলাম।' সুভাষচন্দ্র শুধু 'ধন্যবাদ' বলে বেরিয়ে এসে বাড়ি চলে গেলেন।
তদন্ত কমিটিতে তিনজন ইংরেজ ছাড়া দুজন ভারতীয় সদস্য ছিলেন-আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও হেরম্বচন্দ্র মৈত্র। কমিটির সামনে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুভাষচন্দ্র ও আরও কয়েকজন ছাত্র। ওটেন নিজে কোনও অভিযুক্ত ছাত্রকে চিনতে পারেননি। কলেজের একজন বেয়ারা শুধু সুভাষ ও অনঙ্গ দাম নামে দুজন ছাত্রকে ঘটনার পরে দৌড়ে পালাতে দেখেছে বলে সাক্ষ্য দেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সুভাষের কলেজ থেকে বহিষ্কারের যে আদেশ ইতিমধ্যেই অধ্যক্ষ দিয়েছিলেন, সরকার তা অনুমোদন করে। তিনি অন্য কোনও কলেজে পড়ার জন্য আবেদন করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তা নাকচ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কার্যত সুভাষচন্দ্র 'রাস্টিকেটেড' হন অর্থাৎ কোথাও পড়াশোনা করার সুযোগ আর তাঁর রইল না।
তবে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় যে সুভাষকে আবার কলেজে পড়ার সুযোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তিনি অত্যন্ত ছাত্রবৎসল ছিলেন। বসু পরিবারের সঙ্গে তাঁর অবশ্যই ভাল পরিচয় ছিল। এর ফল হল, সুভাষ স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হলেন। স্কটিশ চার্চ কলেজে খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে তিনি দর্শন অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর পিতা জানকীনাথের ইচ্ছেতেই সুভাষ ইংল্যান্ডে আইসিএস পরীক্ষা দেবার জন্য যাত্রা করেন। তিনি ১৯১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে ২০ অক্টোবর লন্ডনে পৌছান।
আইসিএস পরীক্ষা দেবার ব্যাপারে প্রথম থেকেই সুভাষের অনাগ্রহ ছিল। তাই তিনি লন্ডনে পৌছেই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ভর্তির জন্য। সেখানে তিনি 'মানসিক ও নীতিবিজ্ঞান' বিভাগে ট্রাইপোজ'এর জন্য পড়ার সুযোগ পান। শেষপর্যন্ত বাড়ির সকলের ইচ্ছেতে সুভাষ আইসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তবে আইসিএস পরীক্ষায় সরকারের দাসত্বের চাকরি তিনি নিতে চাননি। তাই শেষপর্যন্ত তিনি আইসিএস থেকে পদত্যাগ করেন। এর পরেও সুভাষ আরও কয়েক মাস কেমব্রিজে থেকে ট্রাইপোজ'এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯২১ সালের জুন মাসে সুভাষচন্দ্র ইংল্যান্ড ত্যাগ করে ১৬ জুলাই জাহাজ থেকে বোম্বাই-এ নামলেন। ওইদিনই বিকালে তিনি গান্ধীজীর সঙ্গে দেখা করে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সুভাষের ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যায়। তিনি গান্ধীজীর পরামর্শে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে দেখা করেন এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীনে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় গণসংগ্রামে যোগদান করেন।
সুভাষচন্দ্র বসু দেশকে কিভাবে ভালোবাসার কথা বলেছেন
উত্তরমুছুন