Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৩

মিষ্টি হাসি আর সুমধুর ব্যবহারই সাফল্যের সিক্রেট মমতার হোটেলের

 ‌‌

সমকালীন প্রতিবেদন : কলকাতার ডালহৌসি এবং বিবাদীবাগ এলাকা অত্যন্ত জনপ্রিয় জায়গা অফিস পাড়া নামে। আশপাশে অজস্র অফিস থাকায় এই জায়গার এই নামকরণ। অফিস যাত্রীদের টিফিন বা লাঞ্চের জন্য প্রচুর পাইস হোটেলও আছে এই এলাকায়। এইবার সেই পাইস হোটেলগুলির মধ্যেই একটি চালাচ্ছেন 'মমতা'।

না না দাঁড়ান, হুট করে ঘাবড়ে যাবেন না। আপনারা যার কথা ভাবছেন তিনি নন। ইনি হলেন মমতা গাঙ্গুলী। আর এইবার এই মমতা গাঙ্গুলী পাইস হোটেল চালিয়ে হঠাৎই ঢুকে পড়েছেন অফবিট নিউজ এর মধ্যে। অফবিট নিউজ কারণ, এটি মোটেও গতানুগতিক খবর নয়।

কলকাতার অফিস এলাকার প্রাণকেন্দ্র হল বিবাদীবাগ বা ডালহৌসি। প্রতিদিন হাজার হাজার অফিস কর্মী ডিউটিতে আসেন এখানে। আর তাদেরই রোজকার লাঞ্চের দায়িত্ব পড়ে এখানকার সমস্ত পাইস হোটেলগুলির উপরে। তবে এখানকার সমস্ত পাইস হোটেলগুলিই সামলান পুরুষেরা। 

আর এবারে সেই বাধাধরা ছককে ভেঙে একজন যুবতী দোকান চালিয়েই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন।  তিনি মমতা গাঙ্গুলী। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ভাইরাল। মিলেনিয়াম পার্কের ঠিক উল্টোদিকে ঢু্ঁ মারলেই খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁকে। বেশ ভিড়ও হচ্ছে তাঁর দোকানে। 

তবে এই অল্প বয়সে অন্যান্য সমস্ত কাজ ছেড়ে এই ভিড়-ভারওয়ালা এলাকায় একটি পাইস হোটেল চালানোর কথা কেন মাথায় এলো মমতার? বিবাদীবাগ বা ডালহৌসি এলাকায় দুপুর হলেই ভিড় জমে যায় অজস্র পাইস হোটেলগুলিতে। তবে ইদানিং বেশিরভাগ অফিস কর্মীদেরই পছন্দের জায়গা হয়ে উঠছে মমতার হোটেলটি। 

নিতান্ত সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মমতা। তবে প্রথম থেকেই তাঁর ভেতরে একটি জেদ ছিল 'জীবনে কিছু করে দেখাতে হবে'। আর সেই কারণেই একপ্রকার তাঁর এই পাইস হোটেল গড়ে তোলা। হোটেলে আসা প্রত্যেকটি গ্রাহককেই অত্যন্ত যত্ন সহকারে প্লেটে সুন্দর করে সাজিয়ে ভাত, ডাল, সবজি, আলু ভাজা, সেইসঙ্গে প্রত্যেকের পছন্দ অনুসারে ডিম অথবা মাছ দিয়ে খাবার পরিবেশন করছেন মমতা।

প্রত্যেক গ্রাহকেরই এই খাবারের সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে থাকছে সুমধুর ব্যবহার এব মিষ্টি হাসি। অত্যন্ত সুন্দর ব্যবহারের সঙ্গে বেশ কম খরচেই এত সুন্দর সুস্বাদু ঘরোয়া খাবারের প্রশংসায় রীতিমতো পঞ্চমুখ অফিস কর্মীরা। তাদের কথায়, 'মমতা নামটিই যথেষ্ট'। 

যেকোনও ধরনের ব্যবসাতেই প্রোডাক্টের সাথে সাথে তাদের ব্যবহারটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। আর সেই সিক্রেটটাই বুঝতে পেরেছেন মমতা। যেখানে অন্যান্য হোটেলের কর্মচারীরা এত ভিড়ভাট্টার মধ্যে তাড়াহু‌ড়োয় কাজ করতে গিয়ে বেশিরভাগ অফিস কর্মীর সঙ্গে হয় গম্ভীরভাবে নয়তো কখনো কখনো বাজে ব্যবহার করে ফেলেন। সেখানে মমতা প্রতিটি কাস্টমারের সঙ্গেই হেসে এবং মিষ্টি মুখে কথা বলেন, খাবার পরিবেশন করেন। আর তার এই কাজটাই সবথেকে বেশি মন জয় করেছে সমস্ত গ্রাহকের। 

মমতা নিজে একজন হোটেল ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্ট। তাহলে হঠাৎই হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার পরেও এইরকম পাইস হোটেল চালানোর কারণ তার কাছে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, প্ল্যানিং করে কোন কিছুই করেন নি তিনি।হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করার পর গুজরাটে চাকরিও করতে চলে যায় মমতা। সবকিছুই বেশ ঠিকঠাক চলছিল। তবে মাঝ পথেই সমস্ত কিছু ওলট-পালট করে দেয় করোনা এবং লকডাউন। লকডাউনের কারণে চাকরি ছেড়ে গুজরাট থেকে চলে আসতে হয় মমতাকে। 

কলকাতায় তার এই বর্তমান পাইস হোটেলটিকে চালাতেন তার বাবা ও মা। তার বাবার একজন সাহায্যকারীর দরকার ছিল সেই সময়। তাই অন্য কোনওদিকে আর কোনও কিছু না ভেবেই বাবাকে সাহায্য করতে নেমে পড়েন তিনি। তারপর থেকেই তার বাবার যাতে আর বেশি কষ্ট না হয়, সেই জন্য ধীরে ধীরে নিজেই এই দোকানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন মমতা। 

প্রথম থেকেই দোকানে মোটামুটি ভালো ব্যবসা থাকলেও মমতা আসার পর থেকে তার ব্যবহার ও খাবারের স্বাদ টেনে এনেছে আরো বেশি পরিমাণ গ্রাহককে। গতানুগতিক সমস্ত দিক থেকে বেরিয়ে একজন কম বয়সী মেয়ে হিসেবে বেশ সফলতার সাথেই একটি পাইস হোটেল সামলাতে পেরে বেশ খুশি মমতা। তার কথায় বাবাকে সাহায্য করার জন্যই এগিয়ে এসেছিল মেয়ে। 

তার কথায়, কোনও কাজই আসলে ছোট নয়। সমস্ত কাজকেই সমান সম্মান দেওয়া উচিত। বরং কোনও কাজ না করে বাড়িতে বসে থাকাই অপরাধ। লকডাউন এবং করোনাকালে যেখানে সমস্ত কিছুই ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় তার সামনে এই অপশন চলে আসায় তিনি সাদরে গ্রহণ করেন এই অপশনটিকে। 




‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন