Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩

এই বাংলার বিদ্যুৎচালিত ঢেঁকি পারি দিচ্ছে বিদেশে

 

Electric-hammer

সম্পদ দে : একটা সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আর কিছু পাওয়া যাক না যাক, 'ঢেঁকি' অবশ্যই পাওয়া যেত। ঢেঁকিকে একদিক থেকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বলা চলে। তবে সময়ের চাকা ঘুরছেই, আর সেই সময়ের সাথে সাথেই আজকাল বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্যের এই স্মারক।

একটা সময় ঢেঁকির এই ব্যাপক প্রচলনের কারণে তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া একটি বিখ্যাত প্রচলিত ব্যঙ্গ আছে যে, 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে'। তবে সেই ঢেঁকিই আজ প্রায় অতীত। কিন্তু ঢেঁকিতে ভাঙা চালের চাহিদা কিন্তু এখনও কমেনি মোটেও। 

বরং এখনও পর্যন্ত গ্রাম বাংলার ছোট দোকান থেকে শুরু করে শহরের বড় বড় বাজার পর্যন্ত, ঢেঁকি ভাঙা চালের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বিদ্যুৎ চালিত ঢেঁকি নির্মাণ করেছে বাঁকুড়া উন্নয়নী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়ারা।

আজকালকার শহুরে মানুষজন অনেকেই ঢেঁকি সম্পর্কে না জেনে থাকলেও গ্রাম বাংলার প্রতিটি মানুষ এবং বাড়ির বড়রা অবশ্যই জানবেন এর ব্যাপারে। ঢেঁকি হল কাঠের তৈরি একপ্রকার বিশাল বস্তু। এর একদিকে মাটিতে একটি গর্ত করে তার ভেতর ধান অথবা চাল দেওয়া হয়, আরেক অংশে সাধারণত বাড়ির মহিলারা এর ওপরে দাঁড়িয়ে চাপ দেন এবং ছেড়ে দেন। 

আর এই ভাবেই উল্টোদিকের গর্তে রাখা ধান অথবা চাল ভাঙ্গানো হয়। এর কাজ অনেকটা এক বিশাল হাতুড়ির মতো।তবে আজকালকার আধুনিক যুগে কেউ আর ঢেঁকি ব্যবহার করেন না। মেশিনে ভাঙানো ধান-গমের চলই বেশি। কিন্তু ঢেঁকির এই পদ্ধতি আজ প্রায় অতীতের পথে চললেও ঢেঁকি ভাঙ্গানো চালের এখনও বেশ চাহিদা আছে বাজারে। 

শীতকাল মানেই পৌষ পার্বণ। আর পৌষ পার্বণে পিঠে হবে না, তা তো হয় না। আর পিঠে তৈরি করতে গেলেই সর্বপ্রথম যে উপকরণটি লাগবে, তা হল চালের গুঁড়ো। আর বাড়ির বড়দের মতে, পিঠে তৈরি করার জন্য সবথেকে সেরা চালের গুঁড়ো পাওয়া যাবে একমাত্র ঢেঁকির মাধ্যমেই।

তবে এই ঢেঁকি পরিচালনা করা সহজ নয় মোটেও। বরং বেশ কষ্টের কাজ। সেই জন্যই আজকাল হারিয়ে যেতে বসেছে এটি। এদিকে, ঢেঁকি থেকে পাওয়া চালের গুড়োর চাহিদা এখনও পর্যন্ত ভালোই রয়েছে বাজারে। আর এই দুটি দিকেই সমানতালে সামাল দেওয়ার জন্যই বাঁকুড়ার উন্নয়নী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ুয়াদের এই 'মোটোরাইজ্ড ঢেঁকি' নির্মাণ। 

পড়ুয়াদের দ্বারা নির্মিত এই ঢেঁকি এবার পাড়ি দিতে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজশাহীর নবাবগঞ্জের একটি সংস্থা বাঁকুড়ার পড়ুয়াদের তৈরি এই বৈদ্যুতিক ঢেঁকি নিজেদের দেশে আমদানি করার জন্য বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই বৈদ্যুতিক ঢেঁকি তাদের এতটাই পছন্দ যে, বাংলাদেশে তা রপ্তানির লক্ষ্যে বাঁকুড়ায় এই প্রকল্পের পুরো কাজ ঘুরে দেখে গেলেন বাংলাদেশের ওই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার মোহাম্মদ রেজাউল হাসান। তবে মাত্র মাসখানেক আগের ভাবনা নয় এটি। 

বাঙালির একসময়ের অন্যতম ঐতিহ্য ঢেঁকি যখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, ঠিক তার পরে পরেই অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার বছর আগে, ২০১৯ সালে এই বিদ্যুৎ চালিত মোটোরাইজ্ড ঢেঁকি তৈরি করে একপ্রকার ইতিহাস সৃষ্টি করেন বাঁকুড়ার উন্নয়নী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা।

কেবলমাত্র বাংলাদেশের একটি সংস্থা নয়, কলেজ সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যের খাদি ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগের পাশাপাশি কোচবিহারের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, এমনকি প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরের মহারাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানেও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে এই ঢেঁকি। 

বাঙালির হারাতে বসা এই ঐতিহ্যের স্মারককে এক নতুন রূপদানের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার জন্য আজ গোটা দেশবাসী তথা বাঙালিরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন বাঁকুড়ার এই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদেরকে। এখন পড়ুয়াদের তৈরি এই ঢেঁকি দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে রওনা দেওয়া কেবলই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তারপরেই বাঙালির এই ঐতিহ্যের স্বাদ কেবলমাত্র বাঙালিরাই নন, পেয়ে যাবেন দেশ-বিদেশের মানুষরাও।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন