সমকালীন প্রতিবেদন : দেশের মাটি ছাড়াও দেশের হয়ে একাধিকবার প্রতিনিধিত্ব করেছেন অন্য দেশের মাটিতে। স্বপ্ন ছিল, একদিন বড় ফুটবলার হবেন। মিলবে অর্থ, সম্মান। আর সেই সঙ্গে ঘুঁচে যাবে সংসারের অভাব। কিন্তু কঠিন বাস্তবের সামনে সেই স্বপ্ন আজ ভেঙে চুরমার।
একসময় কঠোর পরিশ্রম করে নিজের প্রতিভার জেরে যে মেয়ে অনুর্দ্ধ ১৬ এবং ১৯ ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে নিজের জায়গা করে দেশ–বিদেশের মাটিতে নিজের পায়ের যাদু দেখিয়েছেন, সেই মেয়ে আজ সংসার চালাতে বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহ করছেন।
কলকাতার বেহালার শিবরামপুর এলাকার বাসিন্দা, বছর ২৮ এর পৌলমী অধিকারী। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে বাবা এবং দিদির সঙ্গে অভাবের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই পৌলমী স্বপ্ন দেখতেন বড় ফুটবলার হওয়ার।
সেই স্বপ্নকে সফল করতে নিয়মিত ফুটবল চর্চা করতেন। আর তারই জেরে সুযোগ মেলে অনুর্দ্ধ ১৬ এবং অনুর্দ্ধ ১৯ ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে। সেই সূত্রেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে জার্মানী, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের মাঠে ফুটবল খেলেছেন।
শুধু তাই নয়, আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছেন কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রী। কিন্তু এতোকিছুর পরেও জোটে নি নূনতম সম্মান। রাজ্য সরকার তো দূরের কথা, এলাকার কোনও ক্লাব থেকেও মেলে নি কোনও সম্মান।
অতি সম্প্রতি পৌলমীর একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকারের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে কথা বলতে গিয়ে পৌলমীর অনেক চাপা কষ্টের যন্ত্রনা প্রকাশ পেয়ে যায়। ধরে আসে গলার স্বর। চোখের কোনায় চিক চিক করে ওঠে জল। তাঁর কথায়, তাঁর মতো আর কোনও মহিলা ফুটবলারের স্বপ্ন যেন এভাবে হারিয়ে না যায়। যেন নূনতম সম্মানটুকু মেলে।
পেটের খিদে তাঁর ফুটবলার হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আর তাই আজ বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে অভাবের সংসার চালাতে খাবার সরবরাহকারী সংস্থার হয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহের কাজ করতে হচ্ছে পৌলমীকে।
ফুটবলের মাঠ ছেড়ে এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোটর বাইক নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছুটে চলেছেন পৌলমী। সারাদিনের কাজের শেষে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীর তখন বিশ্রাম চায়।
আর তখনই পুরনো সার্টিফিকেট, ছবির অ্যালবামে হাত বুলিয়ে একাএকাই 'হেরে যাওয়া স্বপ্নের' জন্য চোখের জল ফেলেন বাস্তবের কঠিন জীবনে হার না মানা এই তরুণী। স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট নিয়ে এভাবেই জীবন যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পৌলমী অধিকারী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন