Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২

স্বজনের মৃতদেহ যখন সঙ্গী হয়

The-dead-body-of-a-relative

স্বজনের মৃতদেহ যখন সঙ্গী হয়                

অজয় মজুমদার

মানুষ একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে একথা ঠিক, কিন্তু আজব এক রীতি চালু রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পাঙ্গালায়৷ সেখানে মৃতদেহের সঙ্গে স্বজনেরা একসঙ্গে বসবাস করেন৷ সেখানেই শুধু থেমে থাকেননি, মৃতদেরকে প্রতিদিন স্নান করানো, পোশাক পড়ানো, এমনকি খাওয়ানোও হয়। 

ইন্দোনেশিয়া মুসলমান অধ্যুষিত দেশ৷ পাঙ্গালায় তোরাজা সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এমনই রীতি মেনে আসছে৷ ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ১৮০ কিলোমিটার উত্তর–পূর্ব দিকে দক্ষিণ সুলায়েসির পাঙ্গালা৷ সেখানে তোরাজা সম্প্রদায়ের বসবাস৷ তারা প্রধানত খ্রীষ্টান৷ 

জন্মের পর থেকেই তাদের বিশ্বাস, মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয়। বরং জীবনের একটি অংশ। মৃত্যু মানে আত্মার দেহ ত্যাগ নয়৷ মৃত্যু মানে, তিনি জীবিত কথা বলতে পারেন না। তাই এই সম্প্রদায়ের কারও মৃত্যু হলে অন্তেষ্টি ক্রিয়ার বদলে তার বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। তারা মৃতদেহ কফিনের মধ্যে রেখে দেন। ঢাকনা খুলে গল্প করেন৷ 

এভাবে তারা প্রিয়জনকে নিজের কাছে বহুদিন রেখে দেন সামর্থ্য অনুযায়ী। কারণ, মৃতদেহ ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে পচে যাবে। আর সেটা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। এর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োজন হয়। এরপর অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া হয়। তোরাজা সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পর মহিষই তাদের স্বর্গের রাস্তা দেখায়৷ তাই একজন মৃত ব্যক্তির জন্য অন্তত একটি মহিষ বলি দেওয়া বাধ্যতামূলক৷ একটি মধ্যবিত্ত পরিবার একজনের অন্তোষ্টি ক্রিয়ায় ২৪টি মহিষ বলি দেয়৷ অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকলে বলির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে৷ 

তাদের কাছে প্রথম বলি দেওয়া মহিষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা মানে প্রিয়জনের মৃত্যু। বিশেষজ্ঞদের মতে, তোরাজারা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া খুব জাঁকজমক করেই পালন করেন৷ মহিষ কেনার টাকা এবং অন্ত্যেষ্টি রীতির খরচ জমানোর জন্য তারা মৃতদেহ বাড়িতে রাখেন। বলি দেওয়ার পর মহিষের মাংস উপস্থিত আত্মীয়দের খাওয়ানো হয়। তাঁরা অন্ত্যোতি ক্রিয়ার পর মৃতদেহ সহ কফিন নির্দিষ্ট কোনও গুহায় রেখে দেন। বছরে একবার আত্মীয়রা গুহার কাছে যান। কফিন থেকে মৃতদেহ তুলে পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরান, খাওয়ান। 

তাঁদের বিশ্বাস, মৃতদের সম্মান প্রদর্শন করলে তাঁদের আয়ু বাড়বে এবং সৌভাগ্য অর্জিত হবে। কোনও কোনও ব্যক্তি আছেন, যারা মৃতকে ভুলতে পারেন না কোনওভাবেই৷ মাঝেমাঝেই তাঁরা এমন সব কাজ করে বসেন, যা পাগলামো বলে মনে হয়৷ 

ডেভিড  মিশিগানের মানুষ। মৃত বান্ধবীর সঙ্গে একমাস বসবাস করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মারা গিয়েছিলেন ৫৬ বছর বয়সের বান্ধবী কেন ডান্স শিমোন্ম৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের আগে পর্যন্ত এসম্পর্কে পুলিশের কোনও ধারনাই ছিল না। 

নিজের প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকতে পারেননি ডেভিড। তাই নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন৷ পুলিশ অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে শয়নকক্ষে শিমোন্সের লাশ পায়৷ ডেভিডকে গ্রেপ্তার করা হয়৷  প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। পুলিশের মতে, ডেভিড মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন৷

২০১৫ সাল ১৩ মে৷ পুলিশের কাছে ফোন আসে বাসিন্দাদের কাছ থেকে৷ তারা আর গন্ধে কোনওমতেই টিকতে পারছেন না৷ পুলিশ এসে ঘর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে| একাশি বছরের বৃদ্ধা, জয়েশের মৃত বানিয়ে রাখা হয়েছে। ঠিক যেন সাইকো ছবিটি থেকে উঠে এসেছে দৃশ্যটি৷ 

বেলজিয়ামের এক নারীর স্বামী মার্সেলের মৃত্যু হয়েছিল ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে। স্বামীকে এভাবে চলে যেতে দিতে পারেননি৷ তাই মৃত স্বামীকে মমি করে বিছানাতে শু‌ইয়ে রেখেছিলেন, যেন কিছুই হয়নি৷ আদি–অনাদি কাল থেকেই তারা এমনভাবে আছেন। প্রতিবেশীরা হতবাক।

অধিবিদ্যা মডেলগুলিতে আস্তিকেরা সাধারণত এক ধরনের পরকালে বিশ্বাস করে থাকেন। যা মৃত্যুর পর তাদের জন্য অপেক্ষা করে৷ পরকাল বলতে মৃত্যুর পর অন্য এক জগতে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী হোক। সব ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করা হয়নি, জীবিত অবস্থায় তার কৃতকার্যের শাস্তি অথবা পুরষ্কার। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন