সমকালীন প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এই প্রথম পুলিশকে দিয়ে অনুসন্ধানের কাজ চালানো হচ্ছে। আর তাতে বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পরছে। আর এমন পরিস্থিতি দেখে অবাক পুলিশকর্মীরাও।
গ্রামাঞ্চলের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের মধ্যে মূলত যাদের স্থায়ী পাকা বাড়ি নেই, বিপজ্জনক ঘরে বসবাস করেন, সেইসব পরিবারের জন্যই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্প 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা'। এমন দরিদ্র পরিবারগুলিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করতেই সরকারের এই প্রকল্পের ভাবনা।
এই প্রকল্পের আওতায় এনে সেইসব দরিদ্র পরিবারকে পাকা বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কারা এই প্রকল্পের উপভোক্তা হবেন, তা ঠিক করার জন্য একসময় একটি বিশেষ দায়িত্ব পালন করতো সরকার নির্ধারিত একটি সংস্থা।
কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে সেই সংস্থা এব্যাপারে আর কোনও ভুমিকা পালন করছে না। সেখানে শেষবারের মতো ২০১৮ সালে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা সম্প্রতি প্রকাশিত হতেই সেখানে অনেক গড়মিল ধরা পরে।
রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই এব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে এব্যাপারে তালিকা ধরে ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে স্থানীয় থানা।
আর এই অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে কিছুটা অবাক হচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে, এমন মানুষের বাস্তবে দোতলা বাড়ি রয়েছে। এমনই ঘটনা ধরা পরেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানা এলাকায়।
জানা গেছে, শুক্রবার বাগদা ব্লকের হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে অনুসন্ধানে যান বাগদা থানার ওসি উৎপল সাহা। সেখানে বুলু কীর্তনীয়া নামে এক মহিলার নাম উপভোক্তা হিসেবে তালিকায় রয়েছে। অথচ তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁদের দোতলা বাড়ি। সঙ্গে মোটর বাইক, ফ্রিজ ইত্যাদি অনেক কিছুই রয়েছে।
যদিও এব্যাপারে বুলু কীর্তনীয়ার বক্তব্য, কিভাবে তার নাম তালিকাভূক্ত হল, তা তিনি জানেন না। শুধু বুলু কীর্তনীয়াই নয়, প্রতিদিন অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জনের নাম পাওয়া যাচ্ছে, যারা এই প্রকল্পের আয়তায় আসতে পারেন না।
এব্যাপারে বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গাঙ্গুলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও, তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। এদিকে, যাদের পাকা বাড়ি নেই, এই প্রকল্পের আয়তায় আসার যোগ্য, তাদের বাড়িতে গিয়েও অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।
জানা গেছে, বাগদা ব্লকে এই প্রকল্পের জন্য নাম নথিভূক্ত হয়েছে ২৩ হাজার মানুষের। আগামী শনিবারের মধ্যে এই মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুসন্ধানের কাজ সারতে হবে পুলিশকে।
এব্যাপারে এক পঞ্চায়েত প্রধান জানান, অনেক ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে যে, এই তালিকা যখন তৈরি হয়েছে, তখন ওই উপভোক্তার কাঁচা বাড়ি ছিল। বর্তমানে তাঁর আর্থিক পরিস্থিতির বদল ঘটায় তিনি নিজেই পাকা বাড়ি তৈরি করে নিয়েছেন। এই ধরনের উপভোক্তাদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন