মুন্নার আবার আসব
সুনীল কুমার রায়
মুদ্রাপুজা, নালাতান্নি ও কুন্ডলা– এই তিন পাহাড়ি নদীর ত্রিবেনী সঙ্গমে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মুন্নার। প্রকৃতি প্রেমিকদের এক অভাবনীয় স্বর্গোদ্যান 'দি টি কান্ট্রি মুন্নার'। মুন্নারের ইডুকি জেলার SN sujata inn হোটেলে উঠলাম। ঘরোয়া পরিবেশ। সদ্য বিবাহিতদের পক্ষে নিরিবিলি, আদর্শ স্মরনীয় স্থান।
চারিদিকে প্রায় বাহান্নটি বিশালাকার চা বাগিচা। দিগন্ত ব্যাপী সবুজের মখমল। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রতীক এই মুন্নার। ১৫২৪ মিটার উচ্চতায় পশ্চিমঘাট পর্বতের চড়াই–উতরাই অতিক্রমে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ বাগিচা সবাইকে মুগ্ধ করে।চা বাগিচা সহ বিভিন্ন মশলার বাগানের মাধ্যমে সবুজের বিচিত্র সহাবস্থানে এক স্বর্গীয় পরিবেশ এখানে।
১৮৯৮ সালে স্থাপিত ক্যাথালিক চার্চ, ১৮৩৮ সালে তৈরি ক্যাথালিক ক্রাইস্ট চার্চ মাউন্ট কারমেলের শিল্প ভাস্কর্যে অসাধারণত্বের দাবি রাখে। ১৯২৪ সালের প্লাবনে নষ্ট হলেও কিছু নির্দশন এখনও আছে। এখানে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বসবাস বেশি। ভাষা মালায়ালাম। অর্থনৈতিক অবস্থা সীমিত।
চা, কফির বাগানে কাজ, পর্যটকদের কাজে লাগা এবং সামান্য কিছু আয়ের পথ। তবে বেচাকেনার দোকান আছে বেশকিছু। শিক্ষিতের হার বেশি। ১৫০০ মিটার উচ্চতায় একশো বর্গ কিলোমিটার পরিবৃত্তে ইরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান। দর্শনী এক ঘন্টায় মাথাপিছু দুশো টাকা।
চারজনকে নিয়ে মাথা পিছু পাঁচশ টাকার বিনিময়ে ছোট গাড়িতে ২৬৯৫ মিটার উপর সর্বোচ্চ আনাইমুডি অবধি যাওয়া যায়। আনাইমুডি স্থানীয় ভাষায় বাংলা হাতির মাথার মতো পাহাড়ের শীর্ষ দেশ। এখানে ট্রেকিং হয়। অনেককে দেখা গেল।
এখানে সর্বাধিক ১৩১৭ রকমের বিড়াল প্রজাতির নীলগিরি থর বা পাহাড়ি ছাগলের বাস। এরা সাধারণত বাদামি রঙের হয়। এখানে ব্লসম পার্ক, দুরন্ত চিনাকানাল, পল্লিভালাল সহ অনেক ঝর্না দেখা যায়। হাতি, শম্বর আছে।
পার্কের প্রবেশ পথের তোরণে নাম Vaguvarni. এটা নাইকুন্দি পাহাড়। পথে রেস্ট হাউস আছে রাজামলাইয়ে। আনাইকুন্ডার ওপাশে তামিলনাড়ু। টাটাদের বড় চা বাগান এবং ফ্যাক্টরি। কেরালা ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন পরিচালিত FLORCULTET centre এ মাথাপিছু পঞ্চাশ টাকার টিকিটে বিভিন্ন প্রজাতির মরশুমি ফুলের বাগানে ঢুকলাম।
দক্ষ ও অভিজ্ঞ সাহায্যকারীদের প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে অসাধারণ মরশুমি ফুল। সিনেমার শুটিং স্পটের সমতূল্য। ভালো লাগলো। প্রায় কুড়ি জন দেখাশোনা করে, অস্থায়ী কর্মী, মাসে কুড়ি হাজার টাকা। পর্যায়ক্রমে রবিবার ছুটি। এদের মধ্যে দুজন বাঙালি। পথে নালাতান্নি নদীর পাশে ইকো পয়েন্ট। ভালো লাগবে। একটু এগিয়ে ঝর্ণা চোখে পড়ার মতো।
মুন্নার ঘুরে ঘুরে একটা অনুভুতি মনকে আলোড়িত করে। এখানকার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে। সবাই যেন নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অবাঞ্ছিত কিছু নেই। শহর পরিষ্কার রাখা কর্তব্য। কোথাও শব্দ দূষণ নেই। মাইকের তান্ডব নেই, যেটি আমাদের কল্পনার বাইরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন