Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২

Tour : কেরল ঘুরে এলাম

 

I-visited-Kerala

কেরল ঘুরে এলাম

 সুনীল কুমার রায়

সম্মিলনীর সন্ধ্যার মজলিসে হঠাৎ দিলীপের দেওয়া চায়ের কাপে মুখ দিয়ে সঞ্জয় বলে উঠলো, 'এবার কেরলে গেলে কেমন হয় ?' অনেকটা ভূতের মুখে রাম নাম। এসব ব্যাপারে বক্তার প্রায় সময়ই অনীহা থাকে. পরে মত পরিবর্তন করে থাকে। বিস্তারিত আলোচনায় নির্মল, অসিত, মনোজ, সঞ্জয়, নরেশ ও আমি বাড়ির গৃহিণীদের নিয়ে রাজী হলাম। 

অসিত একা. তপন এল দুই জনা, কলকাতা থেকে মনোজদের কলেজের প্রাক্তনী নিরাপদ ও নিতাই পরিবার সহ সম্মতি দিল। তুহিন, গৌর, শম্ভু, অজয়, রবীন, ভোলা, অশোক, প্রদীপ, আমজাদ, আশরফ থেকে গেল। সতের জনের টিকিট কেটে নেওয়া। ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে কথা চূড়ান্ত হয়ে যায়। সব‌ই অল্প সময়ের ব্যবধানে‌। নির্মল, অসিত দায়িত্ব নেয়।

কেরলে আসার নির্দিষ্ট কারণ আছে। শিক্ষা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভূসম্পদ সহ একাধিক বিষয়ে অন্যান্য রাজ্য থেকে কেরল অনেকটা এগিয়ে, তাই স্বচক্ষে দেখতে। আবার পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণেও এই রাজ্য পথ প্রদর্শক। কন্যাকুমারী থেকে এর্ণাকুলাম– এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম একটি বিষয় আমাদের বিস্ময়করভাবে আকৃষ্ট করেছে। এখানকার প্রতিটি মানুষ নিজেদের মাতৃভাষার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। 

ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এরা আপোষহীন। ছাত্র থেকে চাকুরীজীবী, বেকার থেকে টোটো চালক অথবা দিন মজুর প্রত্যেকের মধ্যেই এই উপলব্ধি প্রকট। এখানে প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসেন। ফলে প্রয়োজন ভিত্তিক সামান্য হিন্দি চলে নিজস্ব উচ্চারণে। বেশিরভাগ সময় মালা‌য়ালাম অথবা ইংরেজি।

বারবার বিদেশিদের আগমনের ফলে বাইরের প্রভাব চোখে পড়ে। কিন্তু নিজস্ব স্বকীয়তায় কেরল অনন্য। সমগ্র কেরলের ভৌগলিক অবস্থানের জন্য এখানে শিল্পের কিছু ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কৃষি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিয়ম শৃঙ্খলা, সংস্কৃতিতে অনেক এগিয়ে। সমগ্র কেরল জুড়ে ৪৪ টি নদী। তারমধ্যে ৪১ টি পশ্চিমমুখী, বাকি তিনটি পূর্বমুখী। 

এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ব্যাক‌ওয়াটার বা খাড়ি। ২০০ বর্গকিমি দীর্ঘ ভেম্বানাদ লেক তার অন্যতম উদাহরণ। সুতন্দ্রা, ঝুনু, অভয়া, চিত্রা, সুতপা, কল্পনা– কি একটা বলতে চায় বুঝলাম। কিন্তু বলবার সূযোগ করতে পারছে না, পরে পেল। ওরা আরো একটি ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। 

আসলে এটা আমাদের আগেই বলা উচিত ছিল। Mrs Anna Chandy র নাম আমরা বলিনি কেন। ইনিই ভারতের মধ্যে প্রথম মহিলা, যিনি প্রথম মহিলা মুন্সেফ, প্রথম মহিলা সেসন জজ, প্রথম মহিলা বিচারপতি হন। সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত। ভারতের প্রথম মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট Mrs Onama kujamma এই রাজ্যের। 

কেরলেই প্রথম লেখক সমবায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এক অনবদ্য নজির। এখানে প্রথম শ্রেণীর সংবাদপত্র প্রায় তেইশটি।এখানে হাজার বছর ধরে প্রচলিত ট্রাইবাল ডান্স, চারশো বছরের পুরনো পূরাণ ধর্মগ্রন্থ ভিত্তিক কথাকলি নৃত্য সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত। নারকেল, কলা সহ একাধিক ফল ও রান্নার মশলা, পোস্ত পাওয়া যায়। তবে ভাষার সমস্যা, অতিরিক্ত লোভ ইত্যাদি কারণে একটু চোখ কান খোলা না রাখলে ঠকবার সম্ভাবনা আছে। অনেক পর্যটকদের মধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে  

এখানে পান মশলা দুষ্প্রাপ্য। প্রধানত ভাষার সমস্যা। অসিত, নির্মলকে সুপারি খুঁজতে কয়েক মাইল হাঁটতে হয়েছে। সঞ্জয় পথের কুকুরদের খাওয়াতে ভালো বাসে। সর্বত্রই হতাশ হতে হয়েছে। কারণ, এখানকার পথকুকুরেরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় অতিথিশালায়। সঙ্গীত জগতে কর্ণাটক ও কেরলের নাম সর্বস্ব সমাদৃত। সেই কথা স্মরণে রেখে মনোজ নিরাপদ ও নরেশকে গান শেখাতে ব্যস্ত, নিতাই উৎসাহিত করে এখানে শব্দ নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক নির্দিষ্ট নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে, অযথা হর্ণ বাজিয়ে অপরকে বিঘ্ন করা নিষেধ, ওভার টেক আকাশকুসুম ভাবনা। কোন সিভিক ভলেন্টিয়ার নেই

এত উজ্জ্বল পরিস্থিতির মধ্যেও শিল্পের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য। ফলে বেকার বাড়ছে। সরকারি চাকুরীতে অনেকে আছেন, কিন্তু বছর খানেক সেটি বন্ধ আছে। এর ধারাবাহিকতায় বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতির ভারসাম্য পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল হ‌ওয়া সঙ্গত নয়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা অনেক উন্নত। বহু মানুষ এর সাথে জড়িয়ে। এখানে বাঙালি শ্রমিক চোখে পড়ার মতো।


উন্নয়ন বা উন্নতির ভারসাম্য রক্ষা করতে আর্থসামাজিক অবস্থার কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে। একটি ভালো লক্ষণ, এখানকার নির্বাচিত সরকার মানুষ প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করে। এটাই এখানকার বৈশিষ্ট্য। ভালো মন্দ মিলিয়ে কিছু দিন কাটিয়ে গেলাম। আর একটি জিনিষ লক্ষ্য করলাম, যুবক যুবতীদের মধ্যে খেলাধুলার প্রবনতা বেশি। অনেক জায়গায় টাউন হল, লাইব্রেরী চোখে পড়লো। সবগুলো চালু আছে। তবে কমিউনিষ্ট প্রাধান্য থাকলেও ধর্মের ব্যপারে প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন