সমকালীন প্রতিবেদন : বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে খুলে দেওয়া হল নতুন ঝুলন্ত সেতু। তবে তা মোটেই মানুষের ব্যবহারের জন্য নয়। এই সেতু তৈরি করা হয়েছে বাঁদর, কাঠবেড়ালি সহ বিভিন্ন ছোট প্রাণীদের ব্যবহারের জন্য বনদপ্তরের এমন অভিনব উদ্যোগে খুশি এলাকার মানুষ।
মানুষের কথা চিন্তা করে বানানো হয় অনেক কিছুই। তবে এই ঝুলন্ত সেতু বানানো হয়েছে শুধুমাত্র পশুদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে। রাজ্যের উত্তরবঙ্গে শুধুমাত্র পাহাড়ে নয়, আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পেও ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে পর্যটকদের ভিড়।
আর পর্যটকদের সংখ্যা যতই বাড়ছে, ততই বেড়ে চলেছে মানুষ আর বন্যপ্রাণীদের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা। আর সেই সংঘাতের সম্ভাবনা এড়াতেই বনদপ্তরের তরফ থেকে বানানো হয়েছে এই ঝুলন্ত সেতুটি। তবে এটিই একমাত্র সেতু নয়।
কালচিনী ব্লকের রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী মোড় পর্যন্ত বক্সার জঙ্গলে যাওয়ার রাস্তায় মোট পাঁচটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। জঙ্গলে বাঁদর, কাঠবেড়ালির মতো অনেক প্রাণী আছে, যা কিনা বেশিরভাগ সময় গাছের উপরেই থাকে এবং গাছের ওপর দিয়েই যাতায়াত করে থাকে।
তবে জঙ্গলের মাঝখান থেকে রাস্তা থাকায় অনেক সময় তার অপরপ্রান্তে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় এই প্রাণীদেরকে। সেই জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া জিনিসের সাহায্য নিয়ে এবং দড়ি, কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করে রাস্তার দুপাশের গাছের সঙ্গে বেঁধে দিয়ে সেতুগুলি তৈরি করা হয়েছে।
বনদপ্তরের পক্ষ থেকে এর আগেও পরীক্ষামূলকভাবে কতগুলি সেতু তৈরি করা হয়েছিল। পরে ওই সেতুগুলির সাফল্য দেখে আরও সেতু তৈরির পরিকল্পনা করে দপ্তর। গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে রাজাভাতখাওয়ার ওই রাস্তায় আগেও বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।
যেহেতু বাড়তে থাকা পর্যটকদের কারণে গাড়ির যাতায়াতের পরিমাণও বাড়ছে, সেইজন্য যাতে আর কোনও বন্যপ্রাণীকে অকালে প্রাণ না দিতে হয়, সেই দিকটিতে খেয়াল রেখেই এই অভিনব উদ্যোগ বনদপ্তরের।
রাজাভাতখাওয়ার রেঞ্জ অফিসার অমলেন্দু মাঝি জানান, আগেকার এবং বর্তমানে তৈরি করা সেতুগুলির সাফল্য দেখার পরে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এইরকম আরও সেতু তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়, জঙ্গল এবং নদীতে ঘেরা বক্সা অরণ্যে নানা প্রজাতির পশু-পাখি থেকে শুরু করে বাঘ, হাতির মতো বড় বড় বন্যপ্রাণীর আনাগোনা থাকে।
তাদের সুরক্ষার কথা ভেবে বনদপ্তর ভবিষ্যতে আরও বড় বড় পদক্ষেপ নেবে। তবে শুধুমাত্র বনদপ্তরের পদক্ষেপেই হবে না, আমাদের প্রতিটি সাধারণ মানুষদেরকেও খেয়াল রাখতে হবে বন্যপ্রাণীদের প্রতি। জঙ্গল দিয়ে কখনও গাড়ি চালিয়ে গেলে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাড়িটি বেশি জোরে না চলে।
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় কখনই কোনও বন্যপ্রাণী যাতে আমাদের কারণে কোনও সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চিৎকার, চেঁচামেচি বা জোরে আওয়াজ করা যাবে না। এইরকম কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে আমরাও পারি বনদপ্তরের সঙ্গে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীদের প্রাণের সুরক্ষার করতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন