সমাজ ও পরিবেশের বর্তমান কাজকর্ম সহায়ক হয়েছে ইউজেনিক্স প্রযুক্তি
অজয় মজুমদার
ইউজেনিক্সের বর্তমান কাজকর্ম যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে সমাজ ও পরিবেশের কাজকর্মে৷ সামাজিকভাবে জাতের বিচার অনেকটা কমেছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে৷ বিবাহ বন্ধনের মধ্যে জিনগত মেশামেশার সম্ভাবনা ভীষণভাবে বেড়েছে৷ মানুষ সচেতন হয়েছে৷ জন্মনিয়ন্ত্রণ অনেকটাই হাতের মুঠোয়৷
'জীব দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি'– এই মূল্যবোধের মৃত্যু ঘটেছে৷ ভবিষ্যতে সন্তানদের কিভাবে লালন-পালন করলে সমাজ-সংসারের কাজে লাগবে, এই বিষয়ে বলিষ্ঠ ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে৷ অনেক পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষ আজ আলোকিত হচ্ছেন তাদের কাজের মাধ্যমে।
উঁচু ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষেরা যে পরিবেশের মধ্যে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বৈশিষ্ট্য অনেক ভালো প্রকাশ দেখতে পাবেন, তার প্রমাণ আমরা সব সময় পাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি মানুষের বুদ্ধির তুলনামূলক আলোচনা করাই যায়। ইউজেনিক্স এখন তাই করছে৷
ইউজেনিক্সের দুর্বলতার কারনঃ- জার্মানির ইউজেনিক্স বর্বরতার জেরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার ইউজেনিক্স আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। হিটলার শুধু লক্ষ ইহুদিকে হত্যাই করেনি, কুড়ি লক্ষ ইহুদিকে বন্ধ্যা করেছিল৷ এ কাজ করেছিল ১৯৩৩ সালের কুখ্যাত কালা 'বংশগত আইন' অনুযায়ী৷
সারা বিশ্বে ইউজেনিক্স বর্বরতার ঘটনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিনের পর দিন৷ একসময় সারা বিশ্বজুড়ে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গর্জে ওঠে। ১৯৬১ সালে স্যার জুলিয়ান হাক্সলে ডাবলু ডাবলু এফ(WWF) বা ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেন৷ হাক্সলে ছিলেন ইউজেনিক্স সোসাইটির সভাপতি। ডাবলু ডাবলু এফ এর প্রধান সভাপতি ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাজপুএ বার্নহার্ড। তিনি ছিলেন অভিজাত। মেধা ভান্ডার 'বিল্ডারবার্গ' গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা৷ যা প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৫৪ সালে৷
হাক্সলে লিখেছেন, আজও ইউজেনিক্স স্বাতন্ত্র পরিচিতি সত্তা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি৷ এখন ইউজেনিক্সকে জিন তত্ত্বের প্রয়োগ হলে আমাদের সামনে মূল্যবোধের প্রশ্ন হাজির হয়ে যাবে৷ সাম্রাজ্যবাদী ভাবনা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইউজেনিক্স ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ৷ কোপেনহেগেনে ১৯৩৮ সালে ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান জেনেটিক্স প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তখন থেকে ইউজেনিক্সকে হিউম্যান জেনেটিক্স রূপান্তরিত করার চেষ্টা চলতে থাকে৷ উদ্দেশ্য হল, জেনেটিক্সকে ব্যবহার করে ইউজেনিক্স-র লক্ষ্যে পৌঁছানো৷
দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ জনসংখ্যা৷ এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ইউজেনিক্স৷ ২০০১ সালে সায়েন্স ম্যাগাজিনের ৫ অক্টোবরের সংখ্যায় বিজ্ঞানের ইতিহাসের লেখক গ্যারিয়ান্ড অ্যালেন জেনেটিক্স কে ইউজেনিক্সের আধুনিক রূপ হিসাবে দেখবার চেষ্টা করেন।এই রচনায় বায়োটেকনোলজির সাফল্যকে হাতিয়ার করে বায়ো-মেডিকেল সায়েন্স, এক জাদুদণ্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ এই জাদুদণ্ডের স্পর্শে সব সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে।
কার্নেগী বকফেলার, হ্যানিম্যান, কেলগ হলেন মানবতাবাদী বিওবান৷ তাঁরা ইউজেনিক্সের পেছনে দাঁড়িয়েছিল সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসাবে। এই বিত্তবানেরা দাবি করেন, মেধাগত প্রশ্নে জিনগত পার্থক্য আছে৷ ১৯৯৪ সালে এদের নেতৃত্বে কবর থেকে যীশুখ্রীষ্টকে তুলে আনার দাবি করা হয়৷
উদ্দেশ্য একটাই, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত আর্থসামাজিক অবস্থানের তুলনাকে তুলে ধরা৷ এটা সম্ভব হলে বর্ণগত, মেধাগত, শিক্ষাগত এবং বিওগতভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবদমিত রাখার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা কায়েম করা যাবে৷ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প ভাবনাকে গোড়াতেই ধ্বংস করা যাবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসার সুযোগ থেকে চিরস্থায়ী বঞ্চিত করে রাখার এ এক যুগান্তকারী কৌশল৷
এই তত্ত্বের সমর্থনে অ্যান্ড্রিন গাভিন মার্শাল তার গবেষণাপত্র 'দি টেকনোলজিক্যাল রেভোলিউশন এন্ড ফিউচার অফ ফ্রিডম' এ লিখেছেন, যা জেনেটিক্স মানবগোষ্ঠীর সামনে ব্যাপক ক্ষমতার দ্বার খুলে দিয়েছে৷ এটি কৃত্তিম ক্ষমতা, জীবাবিদ্যাগত কারচুপির ক্ষমতা৷ তাইতো আমাদের পরিবেশ ও জীবনের রাসায়ন সহজেই বেশ খানিকটা পরিবর্তন করে ফেলেছে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন