বাণিজ্যিক শহর এর্ণাকুলাম
সুনীল কুমার রায়
এর্ণাকুলাম এলাম। স্টেশনের খুব কাছাকাছি মসজিদ রোডে শালিমার মেট্রোয় উঠলাম। ভারতের প্রায় সব রাজ্যের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ এই শহরের। দিন রাত ব্যস্ততার মধ্যেই চলে। বিরাটাকার ব্যস্ততম স্টেশনে সাফাই কর্মীরা দিন রাত কাজ করে চলেছে। স্টেশনে রেলওয়ে বোর্ড অনুমোদিত ছাড়া কোনও দোকান নেই। দুজন বাঙালি যুবক ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছে।
এর্ণাকুলাম শহরকে ঘিরে হাজারের বেশি থামের উপর দিয়ে মেট্রোরেল পথ। প্রতিনিয়ত চলেছে, তবে কামড়া কম। মসজিদ রোড থেকে স্টেশন, স্টেশন থেকে প্রধান সড়ক উইলিংটন- এই প্রায় চার কিলোমিটার বহু বাঙালি শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় কাজ করছে। চোখে পড়ার মতো। রাস্তায় পান, বিড়ি বা তামাক জাতীয় কিছু বিক্রয়ের দোকান নেই। এমন কি মদের দোকানও চোখে পড়লো না।
এখান থেকে কোচির দূরত্ব তিন কিলোমিটার। কোচি ভ্রমণার্থী, ব্যবসায়ীদের স্বর্গীয় স্থান। এই শহর আজকের নয়। ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে Alvaree Cabral নামে এক পর্তুগিজ ব্যবসার উদ্দেশ্যে এখানে প্রথম আসেন। এই সময় জলপথে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরাও আসতে শুরু করে।
১৫০২ সালে ভাস্কো ডাগামা এখানে আসেন। এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্তুগিজের স্থাপত্যকলার স্মারক সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চে ১৫২৪ সালে ভাস্কো-ডা-গামা সমাধিস্থ হন। ১৫৩৮ সালে তাঁর পুত্র বাবার দেহ পর্তুগালের লিসবনে নিয়ে যান।
এখানকার অরণ্য ভূমি, বনজ সম্পদ যেমন চন্দন কাঠ, রবার, বিভিন্ন মসলা, সামুদ্রিক মাছ, নারকেল ছোবড়া সহ বহু দামী ও দুষ্প্রাপ্য রত্নভান্ডার লুঠ করবার প্রতিযোগিতায় জলপথে পর্তুগিজ, ডাচ, ব্রিটিশ, মধ্যপ্রাচ্য থেকে হ্যামলেট এবং সব শেষে চীনারা আসে।
এরা প্রথমে আসত পর্যটক হিসেবে। পরে ধর্মের প্রচার শেষে বাণিজ্যের নামে লুন্ঠন। ফলে ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে এরা এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা হয়ে যায়। ইতিমধ্যে ভারত স্বাধীন হয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
কোচি ক্রমশ ভারতের অন্যতম সমুদ্র বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মুম্বাইয়ের পরে দ্বিতীয় স্থান। কোচি আন্তর্জাতিক পোর বন্দর, ভারতীয় নৌ সেনা বাহিনীর ব্যস্ততম বন্দর, যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র। এখানে ডাচ, আরবি সহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস।
সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে ঘন বসতি। আকর্ষণীয় দোকান পসরা সাজিয়ে আছে, অসম্ভব ব্যস্ততম বাণিজ্যিক শহর। অথচ এখানে সব কিছু চলে নিয়মশৃঙ্খলার এবং অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে।
এই শহরে হঠকারীতা নেই, রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, অন্যায় আবদার নেই। এখানকার মানুষের আন্তরিকতায় এটি একটি অন্যতম শহরে পরিনত হয়েছে। চুরি নেই বললেই চলে।
এখানে জিনিস কিনতে হবে দামাদামি করে। আপনাকে সাহায্য করতে এখানে প্রচুর বাঙালি আছে। এখানকার প্রধান সমস্যা ভাষা। খুব জটিল, তবে ইংরাজি ভাষার প্রচলন আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন