সমকালীন প্রতিবেদন : আপনি কি জানেন আমলকির কামাল ? শীতে একটি আমলকি দূরে রাখতে পারে অনেক রোগ। তাই এইসময় প্রতিদিন সেবন করুন একটি আমলকি। আর তাতেই ম্যাজিকের মতো ফল মিলবে। কিভাবে করবেন আমলকির ব্যবহার ? জেনে নিন এই প্রতিবেদনে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রকৃতিই হল সবথেকে বড় চিকিৎসক। কারণ, প্রতিটি ঋতুতে যে সমস্ত শারীরিক সমস্যা এবং রোগ-ব্যাধিতে মানুষ ভোগেন, প্রকৃতি নিজে সেই সব রোগের প্রতিষেধক সেই ঋতুতেই তৈরি করে দেয়। সেজন্যই বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা বলে থাকেন, সব সময় ঋতুভিত্তিক শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত।
বর্তমানে ছয়টি ঋতুর মধ্যে এখন চলছে শীতকালীন ঋতু। আর এই শীতকালে হওয়া সর্দি, কাশি, জ্বর, হাঁপানির মতো রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে প্রকৃতি সৃষ্টি করে আমলকি।
আমলকি হলো এমন একটি ফল, যা শুধু শীতকালে নয় বরং সারা বছরই কোনও না কোনও শারীরিক সমস্যা বা রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। আমলকির এত উপকারিতা যে, তার সম্পর্কে একবার বলতে শুরু করলে তার তালিকা শেষ করে পারা যায় না।
আর এই সকল উপকারিতার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল—
১| শীতকাল আসলেই সাধারণত ঠান্ডা লেগে জ্বর ও সর্দিতে পড়তে হয়। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমণে দুর্বল হয়ে ওঠে শরীর। আর এইখানেই প্রবেশ ঘটে আমলকির, যা বিভিন্ন প্রকার জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
২| ডায়াবেটিক রোগীদের সর্বক্ষণ চিন্তা থাকে তারা কি কি খেতে পারবেন, আর কি কি পারবেন না– তাই নিয়ে। কিন্তু আমলকি নিয়ে তাদের ভাবতে হবে না একবারও। কারণ, এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্রোমিয়াম, যা কিনা ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়ায় সাহায্য করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩| ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ করতেও কাজে লাগে আমলকি। শীতকালে রোজ একটি করে আমলকি সেবন যেমন ভিটামিন সি-এর ঘাটতি কমায়, তেমনি এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
গ্রীষ্মকালে তেল মশলাযুক্ত বাইরের খাবার সবাই এড়িয়ে চললেও শীত আসলেই শুরু হয়ে যায় রোজ রোজ বাইরের খাবার খাওয়া। যার ফলে বাড়তে থাকে ওজন। আর এইখানেই চলে আসে আমলকির আরেক উপকারিতা।
৪| নিয়মিত আমলকির সেবনে শরীরে বৃদ্ধি পায় মেটাবলিজম-এর হার, যা কিনা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই এখন থেকে আর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে ভাবতে হবে না।
৫| আমলকিকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে, যা কিনা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজে আসে।
শুধুমাত্র আমলকি সেবনেই নয়, আরও বহুভাবে কাজে আসে এই প্রতিষেধক ফল।
৬| আমলকির রস শুধু খাওয়ার জন্য নয়, চুলে লাগানোর জন্যেও ব্যবহৃত হয় প্রচুর পরিমাণে। পাকা চুলকে কালো করার জন্য হোক বা চুলের রুক্ষতা দূর করতে, আমলকির জুড়ি মেলা ভার।
উপকারিতা সম্পর্কে তো প্রচুর জানা গেল। এবার জেনে নেওয়া যাক এই সুপারফুড সেবন করার পদ্ধতি–
১| প্রতিদিন দুপুরে একটি করে আস্ত বা কাটা আমলকি অল্প পরিমাণ বিট নুন অথবা চাটমসলা মাখিয়ে কামড়েই খেয়ে নিতে পারেন।
২| রস করে সকালে বা দুপুরে যেকোনও সময় খেতে পারেন, কিন্তু একটি কথা মাথায় রাখতে হবে। আমলকির 'টক' দাঁতের এনামেলকে নষ্ট করতে থাকে। তাই প্রত্যেকবার আমলকি খাওয়ার পর ভালো করে দাঁত ও মুখ ধুতে ভুলবেন না।
৩| বাড়ির বড়দেরকে অনেক সময় আমরা দেখি আমলকি রোদে শুকিয়ে দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পর মুখশুদ্ধি হিসাবে খাচ্ছেন। এইভাবেও আমরা খেতে পারি।
৪| বাড়িতে মা-ঠাকুমারা অনেক সময় আমলকির আচারও বানান, যা কিনা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। আপনি চাইলে এইভাবে আচার বানিয়েও খেতে পারেন।
যেভাবে এবং যখন ইচ্ছা আপনি আমলকি ব্যবহার করুন না কেন, উপকারিতার কোনও শেষ নেই। সবশেষে এটা বলা যেতেই পারে, যেমন আপেল সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, প্রতিদিন একটি করে আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে, তেমনি শীতকালে এই দায়িত্বটাই আমলকি ছিনিয়ে নেয় নিজের কাছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন