সমকালীন প্রতিবেদন : একদিন যদি এমন খবর শোনেন যে, এক যুবক সাইকেলে করে পাড়ি দিচ্ছেন ছয় হাজার কিলোমিটার, তাও আবার কি না মাত্র ৩৪ দিনের মধ্যে, তাহলে তার জন্য আপনার আনন্দ ও গর্ব দুটোই হবে বৈকি।
কিন্তু যদি সেই যুবকের বয়স হয় ৬৬ বছর, তবে! চমকে যাওয়ার মতই একটি খবর বটে। তবে তা আমাদের জন্য। ৬৬ বছরের গগন খোসলার কাছে তো এটি জলভাত মাত্র।
বহু বছর ধরেই গগনবাবু সাইকেল নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন কোনে। তবে ২০১৬ সালে তিনি সাইকেলে করে কাশ্মীরের লেহ্ থেকে দক্ষিণের কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
প্রথমবারের সেই সফরে তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৬০ বছরের কাছাকাছি। আর সেই সাইকেল অভিযানের প্রায় পাঁচ বছর বাদে আবারও গগনবাবু বেরিয়ে পড়েছেন আরও বড় একটি যাত্রায়। তাঁর এবারের টার্গেট হলো সোনালী চতুর্ভুজ।
কি এই সোনালী চতুর্ভুজ? ভারতের অন্যতম চারটি সবথেকে বড় শহর– দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই এবং মুম্বাইকে জুড়ে তৈরি এই সোনালী চতুর্ভুজ। গত ২২ নভেম্বর তাঁর নিজের শহর দিল্লি থেকে তিনি এই যাত্রা শুরু করেন। গত সোমবার তিনি এসে পৌঁছান কলকাতায়।
মাত্র ৩৪ দিনে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটারের থেকেও বেশি রাস্তা পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রতিদিন ২০০ কিলোমিটার করে সাইকেল চালানোর টার্গেট নিয়েছেন গগন খোসলা। দিল্লি নিবাসী গগন খোসলার এই সাইকেল রাইড এর পেছনে আসল লক্ষ্য হলো, করোনাকালীন শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শিশুদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের শিক্ষার জন্য ফান্ড যোগাড় করা।
আন্তর্জাতিক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে প্রায় এক কোটি টাকার ফান্ড যোগাড় করার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন তিনি। যে বয়সে প্রায় সকলেই বাড়িতে বসে আরামে বাকি জীবনটা কাটানোর কথা ভাবেন, সেই বয়সে গগনবাবুর এই লক্ষ্য ও ইচ্ছাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁর পরিবার থেকে শুরু করে দেশবাসী সকলেই।
তাঁর মতে বয়স শুধুই একটা নম্বর মাত্র। কারোর শরীরের ক্ষমতা শুধুমাত্র বয়সে নয়, নির্ভর করে তার মানসিক শক্তির ওপর। আর এই বিপুল মানসিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই এই ৩৪ দিনে মোট তিনটি জাতীয় সড়ক, যা কিনা যথারীতি ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক, ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে ৬৩০০ কিলোমিটার পথ পেরবেন গগন।
তাঁর এই সাইকেল রাইডটি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে শরীর চর্চা সম্পর্কেও অনুপ্রাণিত করছে সকলকে। বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে চললে, নিয়মিত সাইক্লিং এর অভ্যাস যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনই শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে সুস্বাস্থ্য গড়তেও সাহায্য করে। এমনকি শরীরে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর করে।
গগনবাবুর এই পদক্ষেপ এর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলা কথাও প্রত্যেককে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করছে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমার পরিবার এটি জানে যে, আমি একবার একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে পেছনে ফিরে তাকানোর আর কোনও স্থান নেই। আমি এটা বিশ্বাস করি যে আমাকে জীবনে কিছু অর্জন করতে গেলে কিছু কিছু সময় ঝুঁকি নিতেই হবে।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন