শম্পা গুপ্ত : বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জেলার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা একপ্রকার নবজন্ম দিলেন দরিদ্র এক আদিবাসী বৃদ্ধার। কলকাতা ছাড়াও জেলার একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে যে এইধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, তা আরও একবার প্রমানিত হল।
জানা গেছে, পুরুলিয়ার মানবাজার মহকুমার মাঝিহীড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬০ বয়সের রানী মাহালীর সংসার চলে বাঁশের কাজ করে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় এই পরিবারকে। মাস খানেক ধরেই পেটের অসহ্য যন্ত্রনায় ভুগছিলেন রানী মাহালী। সঙ্গে জন্ডিসেও আক্রান্ত হন তিনি।
নিজেদের গ্রামে চিকিৎসা করিয়ে কোনও সুফল না মেলায় পরিবারের লোকেরা তাকে নিয়ে সোজা চলে আসেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানকার শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল বৃদ্ধাকে দেখার পর বেশ কিছু পরীক্ষা করতে বলেন।
পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় রানী মাহালীর প্যানক্রিয়াসে সমস্যা রয়েছে। দ্রুত তা অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন বলে চিকিৎসক জানান। সেইভাবে দিনক্ষণও ঠিক হয়ে যায়। রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক সৃজন রায় নিজে রক্ত দান করেন।
বুধবার হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ছ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে এই জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল এই চিকিৎসক দলে ছিলেন সৃজন রায়, সিদ্ধেশ্বর কিসকু, সোমনাথ বিশ্বাস এবং সাগুণ সোরেন। সঙ্গে অ্যানাসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক দলে ছিলেন সুশান্ত হালদার, সোমা সান্যাল, অনামিতা মণ্ডল এবং হর্ষপ্রভ দত্ত।
শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল জানান, অস্ত্রোপচারের পর রানী মাহালী এখন ভালো আছেন। পুরুলিয়ার মতো জেলার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার অতি বিরল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ সুকোমল বিষয়ী।
বৃদ্ধার বড় ছেলে আনন্দ মাহালী জানান, তাঁর মা বেশ কিছুদিন ধরে পেটব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। বাড়ির কাছে সরকারি হাসপাতালে তাঁর মায়ের চিকিৎসা হওয়ায় যথেষ্ট স্বস্তি পেয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, কথায় কথায় জেলার হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে রোগীদের স্থানান্তর করার বিষয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী কড়া পদক্ষেপ করেছেন। জেলার হাসপাতালেও যে জটিল অস্ত্রোপচার সম্ভব, তা প্রমান করলেন পুরুলিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন