সমকালীন প্রতিবেদন : স্টেশনের জন্মদিন পালন। শুনতে অবাক লাগলেও এমনই অদ্ভুত জন্মদিন পালিত হল উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা রেল স্টেশনে। আর পাঁচটা জন্মদিন সাধারণত যেভাবে পালন করা হয়, ঠিক সেভাবেই পালন করা হল স্টেশনের জন্মদিন।
আঞ্চলিক ইতিহাস ঘেঁটে গোবরডাঙার বর্তমান বাসিন্দাদের অনেকেই জানতে পেরেছেন, ১৮৮৩ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম শিয়ালদা থেকে গোবরডাঙায় ট্রেন এসে থেমেছিল। তখন বিদ্যুতের আলোও ছিল না। আজকে সেই দিনটি ১৪০ তম বর্ষে পা দিল।
এতোদিন এই দিনটির কথা স্থানীয়দের অনেকে জানলেও সেই দিনটিকে যে জন্মদিন হিসেবে পালন করা যেতে পারে, তা প্রথম মাথায় আসে এলাকার কয়েকজন নতুন প্রজন্মের যুবকের। তাঁদের এই ভাবনার সঙ্গী হয় গোবরডাঙা রেলযাত্রী সমিতি। শুরু হয় স্টেশনের জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা।
এরপর নিজেদের এই ভাবনা এলাকার বৃহত্তর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবং তাঁদের মতামত জানতে 'আমার শহর গোবরডাঙা'–র ফেসবুক পেজে জন্মদিন পালনের ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেই পোষ্ট দেখে আগ্রহ দেখান অনেকেই। সেই প্রতিক্রিয়া পেয়ে এরপর শুরু হয় আমন্ত্রণ জানানোর কাজ।
রেল দপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, পুরপ্রধান সহ বিশিষ্টজনদের এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। মঙ্গলবার রাত ১১ টা থেকে শুরু হয় স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সাজিয়ে তোলার কাজ। বেলুন, ফুল, মোমবাতি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয় স্টেশন চত্বর।
যেহেতু ১৪০ তম জন্মদিন, আর তাই ১৪০ টি প্রদীপ এনে গোটা স্টেশন এলাকা আলোকিত করা হয়। চক দিয়ে 'শুভ জন্মদিন' লেখা হয়। আর ঘড়ির কাঁটা রাত ১২ টা ছুঁতেই কাটা হয় কেক। গভীর রাতে এভাবেই গোবরডাঙা স্টেশনের জন্মদিন পালনে মেতে ওঠেন নবীন থেকে প্রবীণ সকলেই।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ড: সুনীল বিশ্বাস জানান, এটা শুধু জন্মদিন পালন নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা স্মৃতি। ৮০ বছর আগে স্থানীয় এক লেখক গোবরডাঙা স্টেশনের প্রথম ট্রেন চলাচল নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেই লেখা এদিন পাঠ করা হয়।
স্টেশনের জন্মদিন পালন করা নিয়ে স্থানীয় মানুষের এই আবেগ দেখে অবাক গোবরডাঙা স্টেশন মাস্টার সংসপ্তক বিশ্বাস। তিনি জানালেন, স্টেশনের যে জন্মদিন পালন করা যেতে পারে, তা তাঁর চাকরি জীবনে কখনও দেখেন নি বা শোনেন নি।
এই দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম হল, সকালের দিকে শিয়ালদাগামী একটি লোকাল ট্রেন চালু করা, করোনার সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া বিকেলের শিয়ালদাগামী ট্রেনটিকে ফের চালু করা, স্টেশনের পুরনো ওভার ব্রিজের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা, স্টেশনের পশ্চিমদিকে একটি টিকিট কাউন্টার অথবা ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন