সমকালীন প্রতিবেদন : ডিসেম্বরের শুরু থেকেই জাঁকিয়ে পড়তে শুরু করেছে শীত। কিন্তু এই শীতেও কি আপনি স্নান করছেন ঠান্ডা জল দিয়ে? যদি তাই হয় তবে জেনে রাখুন, আপনি ডেকে আনছেন ব্রেনস্ট্রোক এর মতো বিপদকে। একদমই ঠিক শুনছেন। মনে হতেই পারে যে, ঠান্ডা জলে স্নান করার সঙ্গে ব্রেনস্ট্রোকের কি সম্পর্ক।
তবে জেনে রাখুন, পরিসংখ্যান মতে, গরম কালের তুলনায় শীতকালেই মানুষের মৃত্যুর হার বেশি আমাদের দেশে। যার মধ্যে কিনা বাড়িতে বাথরুমে স্নানের সময়তে হঠাৎই ব্রেনস্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয় অনেকেরই। ফলে এখন থেকেই যত্ন রাখতে হবে নিজেদের। অজান্তে করা একটি ভুলের মাশুল দিতে চলে যেতে পারে জলজ্যান্ত একটি প্রাণ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন হয় এই রকম ব্রেনস্ট্রোক। আর কিভাবেই বা বাঁচবেন এর থেকে।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্নান করার সময় ঠান্ডা জল ব্যবহার করলে শরীরের তাপমাত্রা হুট করে কমে যায় ব্যাপক পরিমাণে। ফলে শরীরের শিরা ও ধমনীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। আর তাতে রক্তচাপ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়।
আর এই সময় মাথায় এবং গায়ে ঠান্ডা জল ঢালা মাত্রই মস্তিষ্কে অবস্থিত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী অ্যাড্রিনালিন হরমোন দ্রুত নিঃসৃত হয়ে শরীরের রক্তচাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যার কারণেই বেশিরভাগ সময় ঘটে যায় ব্রেনস্ট্রোকের মতো ঘটনা।
বাথরুমে ব্রেনস্ট্রোকের মতো ঘটনা বয়স্ক মানুষদের মধ্যেই বেশি পরিমাণে ঘটে। বয়স যতই বাড়ে, মস্তিষ্কের কোষগুলি এবং শিরা উপশিরাগুলিও ততই দুর্বল হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ঠান্ডা জলে স্নান করার কারণে হঠাৎ করেই রক্তচাপ বেড়ে গেলে ধমনী সেই চাপ সহ্য না করতে পারায় মস্তিষ্কেই শিরা ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যায়।
শুধুমাত্র বয়স্কদের মধ্যেই নয়, যাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ কলেস্টরল, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটির মতো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও ব্রেনস্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ব্রেনস্ট্রোক হলে তার লক্ষণগুলি কি কি, তা জানাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ব্রেনস্ট্রোক হলে সাধারণত শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশ দুর্বল হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। রোগী ঠিক করে কথা বলতে না পারায় তোতলাতে শুরু করে। হাত-পাও অসাড় হয়ে আসে। ব্রেনস্ট্রোকের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় রোগীর চোখ, মুখ এক দিকে বেঁকে যায়। রোগীর চোখে অন্ধকার নেমে আসে। খানিকক্ষণের মধ্যেই রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
এই ধরনের বিপদ থেকে বাঁচতে শীতকালে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানা উচিত সকলেরই। যেমন, শীতে ঠান্ডা জল দিয়ে স্নান করা এড়িয়ে চলতে হবে। বয়স্ক বা শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত মানুষদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা জলে স্নান সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ।
সব সময় স্নানের বালতিতে অল্প গরম জল মিশিয়ে তবেই স্নান করুন। চেষ্টা করবেন, জল প্রথমেই আপনার মাথায় না ঢালার। প্রথমে পায়ে, তারপর শরীরে এবং শেষে মাথায়। এইভাবে ধাপে ধাপে শরীরে জল ঢাললে আপনার শরীরও তাপমাত্রার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। আর এতে আপনার স্ট্রোকের সম্ভাবনাও অনেকাংশে শেষ হয়ে যাবে।
তবে এখানেই শেষ নয়। শীতকালে শরীরকে গরম রাখতে গেলেও আপনাদেরকে কয়েকটি কথা মেনে চলতে হবে। যেমন–
১| শরীরকে গরম রাখার জন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বের করে নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও হাঁটুন।
২| মরশুমি বিভিন্ন শাক-সবজি এবং ফল আপনাদের শরীরকে উষ্ণ রাখতে ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
৩| শীতে বাইরে কোথাও বেরোলে অবশ্যই শীতবস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।
৪| স্নান করার সময় প্রতিদিন ঈষদুষ্ণ জলেই স্নান করতে হবে।
প্রতিদিনকার এইরকম কিছু অভ্যাস গঠন করলে এবং নিয়ম মেনে চললে যেমন ভালো স্বাস্থ্য গড়ে ওঠে, ঠিক তেমনই ব্রেনস্ট্রোকের সম্ভাবনাকেও নির্মূল করা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন