শাশ্বতী চট্টোপাধ্যায় : ২৪ ডিসেম্বরকে মহামানব যীশুর আবির্ভাবের প্রাক-দিবস উপলক্ষে 'ক্রিসমাস ইভ' হিসাবে পালন করা হয়। কিন্তু এই দিনটি অন্য একটি কারণে ভারত তথা বিশ্বের ইতিহাসে একটা বিশেষ দিন।
১৩৬ বছর আগে এই ২৪ ডিসেম্বরের রাতেই তৎকালীন ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক তথা সামাজিক অভিমুখ বদলে দেওয়া যুগান্তকারী একটি মুহূর্ত এসেছিল। হুগলি জেলার একটি শান্ত, অখ্যাত গ্রাম আঁটপুর।
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগষ্ট কাশীপুর উদ্যানবাটীতে ঠাকুরের দেহত্যাগের পর এইদিন বাবুরামের মা বাবুরামকে আঁটপুরের বাড়িতে ডেকে পাঠান। ওঁরা ছিলেন আঁটপুরের জমিদার।
এই সময় সঙ্গে শুধু নরেন্দ্রনাথের থাকার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনাচক্রের ঠাকুর রামকৃষ্ণের ষোড়শ দিকপাল শিষ্যের মধ্যে বিবেকানন্দ সহ মোট ৮ জন শিষ্য এসে উপস্থিত হন। আর তারপরেই ঘটলো বাংলা তথা ভারতের এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ।
রামকৃষ্ণ মঠ মন্দির প্রতিষ্ঠার বাসনা নিয়ে সেই রাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে আঁটপুরে দীক্ষাগ্রহণ করে নতুন নাম নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়লেন ওই ৮ শিষ্য। সঙ্গে উদ্দেশ্য ছিল, বেদান্ত ধর্মের মূল সূত্র পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার। নতুন নাম ও জড়িয়ে বস্ত্র নিলেন সকলেই।
এই ৮ শিষ্যের মধ্যে বাবুরাম ঘোষের নামকরণ হল স্বামী প্রেমানন্দ, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীর স্বামী সারদানন্দ, তারকনাথ ঘোষালের স্বামী শিবানন্দ, নিত্যনিরঞ্জন ঘোষের স্বামী নিরঞ্জনানন্দ, শশীভূষণ চক্রবর্তীর স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ, কালীপ্রসাদ চন্দ্রের স্বামী অভেদানন্দ, গঙ্গাধর ঘটকের স্বামী অখন্ডানন্দ এবং সারদাপ্রসন্ন মিত্রের স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ।
তবে নরেন্দ্রনাথ তখনই স্বামী বিবেকানন্দ হননি। তিনি সেই সময় স্বামী বিবিদিশানন্দ নাম নিয়েছিলেন। পরে ক্ষেত্রীর মহারাজার অনুরোধে বিবেকানন্দ নাম হয়। ধুনি জ্বালিয়ে বিরজা হোমের মাধ্যমে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের অনুগামীরা।
সেই ঘটনাকে মাথায় রেখে আজও প্রতি বছর ২৪ ডিসেম্বর ‘ধুনি উৎসব’ পালিত হয়ে আসছে বাবুরাম মহারাজের ভিটেতে। অধুনা যা ‘আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠ’ নামে পরিচিত। মহা সমারোহে আজও এই দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন