সমকালীন প্রতিবেদন : ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসার কাছে হার মানলো ব্যক্তিগত সমস্যা। সরকারি নির্দেশে অন্য স্কুলে বদলির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আবেগ, ভালোবাসাকে সম্মান দিয়ে ব্যক্তিইচ্ছাকে পরিত্যাগ করলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বদলি নিয়ে অন্য স্কুলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত শেষপর্যন্ত বাতিল করলেন প্রধান শিক্ষক।
২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বাঁকুড়া জেলার সিমলাপালের মাচাতোড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলের দায়িত্ব নেন মনোরঞ্জন গোস্বামী। গত প্রায় ৬ বছর ধরে এই স্কুলকে নিজের মনের মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর দায়িত্বে স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ আরও বেশি অনুকূল হতে থাকে।
স্কুলের সহ শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকদের পছন্দমতো অন্য স্কুলে বদলির সুবিধার্থে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ পোর্টাল চালু করা হয়। যাতায়াতের সুবিধার কারণে বাড়ির কাছের একটি স্কুলে বদলির জন্য আবেদন করেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন গোস্বামী।
শিক্ষা দপ্তর সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁর বদলির নির্দেশিকা জারি করে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী স্কুল পরিচালন কমিটির এব্যাপারে অনুমোদন প্রয়োজন হয়। মঙ্গলবার সেই ব্যাপারেই প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে স্কুলে পরিচালন কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।
এই বৈঠকের কথা কোনওভাবে জেনে যায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। তারা আরও জানতে পারে যে, তাঁদের প্রধান শিক্ষক অন্য স্কুলে বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। আর তারপরই ছাত্রছাত্রীরা দলবদ্ধভাবে প্রধান শিক্ষকের ঘরে এসে পরিচালন কমিটির সদস্যদের সামনেই তাঁকে স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে না যাওয়ার জন্য কাতর অনুরোধ করতে থাকে।
নাছোড় ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, তাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুবই দায়িত্ববান একজন মানুষ। তিনি এই স্কুলে আসার পর স্কুলের অনেক উন্নতি হয়েছে। কোনও ক্লাসে শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে প্রধান শিক্ষক নিজেই সেই ক্লাসে হাজির হয়ে ক্লাস নেন। তাই এমন প্রধান শিক্ষককে তারা ছাড়তে চায় না।
স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এমন আবদার, ভালোবাসায় আপ্লুত প্রধান শিক্ষক। তিনি জানালেন, শিক্ষকতা জীবনে মঙ্গলবারের ঘটনা তাঁর কাছে বড় পুরষ্কার। ব্যক্তিগত সুবিধার কারণে স্কুল বদল করার সিদ্ধান্ত নিলেও ছাত্রছাত্রীদের এই ভালোবাসার কাছে হার মেনে তিনি শেষপর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
কতিপয় স্কুল শিক্ষকের সম্পর্কে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মাঝেমধ্যেই নানা অনিয়মের অভিযোগ শোনা যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে মনোরঞ্জন গোস্বামীর মতো একজন প্রধান শিক্ষকের কাহিনী নতুন করে শিক্ষককূলকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন