সম্পদ দে : পৌষ মাস এখন অপেক্ষা মাত্র। এই অপেক্ষার মাঝেই বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্যের সংস্কৃতি পৌষ সংক্রান্তিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শুরু হল এক অন্যরকম কর্মশালা। যেখানে হোয়াইট বোর্ডে ছবি এঁকে খাতা-কলমে শেখানো হচ্ছে পিঠেপুলির ঐতিহ্য ও তা তৈরির প্রণালী।
অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের। তারপরেই বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি অন্যতম পছন্দের পার্বণ পৌষ সংক্রান্তি। নতুন ফসলের আনন্দে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। মকর সংক্রান্তিতে নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও ভারতীয় সংস্কৃতিতে এটি উত্তরায়নের সূচনা হিসেবেও পরিচিত।
এই উৎসবকে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। আর এই শুভ সময়ের সূচনা উদযাপন করার মিষ্টিতম প্রক্রিয়াটির নাম হলো পিঠেপুলি পার্বণ। ইতিমধ্যেই রাজ্যে শীতের আমেজ পড়ে গেছে। শুরু হেমন্তকাল।
আর হেমন্তকাল মানেই কিন্তু আকাশে–বাতাসে শুধু ঝোলা গুড়ের গন্ধ, সেই সঙ্গে চালের গুড়ো, নারকেল কোড়া, পাটালি, সন্দেশ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি লোভনীয় জিভে জল আনা হরেকরকম পিঠে। কিন্তু দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে এই ঝোলা গুড়ের গন্ধ ও পিঠেপুলির স্বাদ।
বর্তমান যুগে বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতায় বাঙালির এই প্রাচীন সংস্কৃতি যেন বিপন্নতার মুখে। আর সেই সংস্কৃতি ধরে রাখতেই খোলা আকাশের নিচে, প্রকৃতির কোলে পিঠে তৈরি করার কর্মশালার মধ্যে দিয়ে এই পার্বনকে বাঁচিয়ে রাখার সংকল্প করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে সাধারণ গ্রাম বাংলার ইলা অধিকারী, রানু সরকার, মিনা দত্তদের মতো মহিলারা।
পিঠেপুলি তৈরি করার এ এক নতুন পড়াশোনার অধ্যায়। প্রশিক্ষকেরা রীতিমতো বোর্ডে পিঠেপুলির প্রস্তুতি ও পরিমাণ এঁকে দেখাচ্ছেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই তা খাতা বন্দি করে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
উদ্যোক্তাদের মতে, এর মধ্যে দিয়ে যেমন একদিকে প্রাচীন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বজায় রাখা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে, জীবন জীবিকার প্রাচীন সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রেখে আগামী দিনের পথ চলা শেখানো হচ্ছে।
সাধারণের থেকে একদমই অন্যরকম এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হলো, ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে যাওয়া এই প্রাচীন সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং বিভিন্ন পরিবার যাতে পিঠেপুলি তৈরি করে মেলায় বিক্রি করে জীবন জীবিকা চালাতে পারেন, সেই দিকে খেয়াল রাখা।
অন্যদিকে, এই কর্মশালার আরও একটি বড় উদ্দেশ্য হল– নতুন প্রজন্মকে পিঠে পার্বণের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা। এই কর্মশালার শিক্ষার্থী দিশানী ঘোষাল, তিয়াস ব্যানার্জি, মৃত্তিকা ব্যানার্জিরা জানান, এখনকার নতুন প্রজন্ম হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল সাইটগুলির কারণে মোবাইল ফোনেই আবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
কিন্তু তার থেকেই বেরিয়ে আসার জন্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমান সময়ে যেখানে ঠাকুমা-দিদাদের হাতের পিঠেপুলির স্বাদ নতুন প্রজন্ম প্রায় ভুলতে বসেছে, সেখানে এইরকম কিছু কর্মশালার আধ্যমে সেই ঐতিহ্যকে বজিয়ে রাখার চেষ্টা সত্যিই মন জয় করে নেয় সকলের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন