গান্ধীনগরের আদালাজ স্টেপ ওয়েল এবং কাঁকরিয়া হ্রদ
অজয় মজুমদার
গুজরাটের গান্ধীনগর জেলার একটি গ্রাম হল আদালাজ। এই গ্রামে একটি বিখ্যাত টেপ ওয়েল রয়েছে৷ ভারতীয় স্থাপত্যে কাজের চমৎকার উদাহরণ হল স্টেপ ওয়েল৷ এটি ১৪৯৮ সালে রানা বীরসিংহ (ডান্ডাই দেশের ভাঘেলা রাজ বংশ) এর স্মৃতিতে তাঁর স্ত্রী রানী রুদাদেবী দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
গুজরাটি এবং মারোয়ারি ভাষায়, সোপানটিকে একটি ভাঁজ (জলের স্তরের দিকে নিয়ে যাওয়া) বলা হয়। আদালাজের মতো কূপগুলি একসময় গুজরাটের আধা-শুষ্ক অঞ্চলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কারণ তারা পানীয়, ধোঁয়া-কাচা এবং স্নানের জন্য জল সরবরাহ করত। এই কূপগুলি পবিত্র আচার অনুষ্ঠানের স্থানও ছিল৷
আদালাজের কূপটি খুব জনপ্রিয় ছিল৷ বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সংগ্রহের জন্য পাকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। মহেঞ্জোদারো শহরের কূপ এই কূপের পূর্বসূরী হতে পারে৷ আদালাজ কূপটি পাঁচতলা গভীর৷ গভীর কূপগুলিতে সাংস্কৃতিক স্থাপত্যের চিত্রায়ন হলো ধাপ কূপের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা, যা প্রথমে হিন্দুদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মুসলিম শাসনকালে ইসলামী স্থাপত্যের সঙ্গে অলংকৃত ও মিশ্রিত হয়েছিল৷
১৫ দশকের কিংবদন্তি অনুসারে ভাঘেলা রাজ বংশের রানা বীর সিংহ একজন হিন্দু শাসক৷ তিনি এই অঞ্চলের রাজত্ব করেছিলেন। তার রাজ্য ছিল ছোট। তাঁর জনগনের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য রানা একটি বড় ও গভীর সোপান নির্মাণ শুরু করেন।
এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার আগে, প্রতিবেশী রাজ্যের মুসলমান শাসক মোহাম্মদ বেগদা আক্রমণ করে। রানা যুদ্ধে নিহত হন এবং মোহাম্মদ বেগদা তখন এলাকা দখল করেন। ইতিহাসের অনেক ঘটনা আরও বলার ছিল যা সম্ভব হলো না।
এরপর আমরা গেলাম কাঁকরিয়া হ্রদ বা Kankaria Lake. এই লেকটি একটি কৃত্রিম লেক যা গুজরাটের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক হিসেবে স্বীকৃত৷ এটি মনিনগর এলাকায় অবস্থিত৷ লেকটি লম্বায় ৫৬০ মিটার৷ ১৪৫১ সালে সুলতান কুতুবুদ্দিন আহমেদ শাহ দ্বিতীয় এর শাসনকালে সম্পন্ন হয়েছিল৷
যদিও এর উৎস কখনো কখনো চালুক্য যুগে স্থাপন করা হয়। লেকের চারপাশে লেকফ্রন্ট তৈরি হয়েছে৷ সেখানে চিড়িয়াখানা, টয়ট্রেন, শিশুদের বিনোদন করবার ব্যবস্থা, বেলুন রাইড, ওয়াটার রাইড, ফুডস্টল এবং বিনোদনের অনেক আকর্ষণ করবার ব্যবস্থা রয়েছে।
আমরা সন্ধ্যার সময় পুরো লেকটা টয় ট্রেনে ঘুরে নিলাম৷ টিকিট জনপ্রতি ৩০ টাকা৷ এক কথায় অসাধারণ৷ কাঁকুরিয়া কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয় ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে, সপ্তাহ ব্যাপি উৎসবের মধ্যে দিয়ে৷ রাত নটা। আমরা ফিরে গেলাম আমাদের আশ্রয় 'কোহিনুর প্লাজা'-তে৷
ফেরার সময় দেখলাম অটল সেতু৷ সবরমতি নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড় জুড়তে তৈরি হয়েছে পায়ে চলার এই সেতু। এই সেতুটি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির স্মৃতিতে নাম রাখা হয়েছে 'অটল সেতু'। চোখ ধাঁধানো এই সেতুটি বর্তমানে গুজরাটের গর্ব৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন