Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২

Tour : গির ন্যাশনাল পার্ক

Gir-National-Park

গির ন্যাশনাল পার্ক                

অজয় মজুমদার

আমরা সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে দিউ থেকে গির অরণ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হই৷ দিউ থেকে গির অরণ্যের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। গির জাতীয় অরণ্য গুজরাটে জুনাগড়ের মধ্যে অবস্থিত৷ ১৯৬৫ সালে এই জাতীয় অরণ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এটি ৩.৩৮৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত৷ এই জাতীয় উদ্যানটি এশিয়াটিক সিংহ-র জন্য বিখ্যাত। 

গির জাতীয় অরণ্যের পাশেই হোটেল স্টার নামের হোম স্টে-তে আমরা উঠলাম৷ অবস্থান এবং ঘরগুলি দেখে সবারই মন ভরে গেল৷ তবে এখানে থাকবো তো মাত্র দুটি রাত। জঙ্গলটি মেনডারদা মহকুমা বা তহলকা, জেলা জুনাগড়, ব্যাংক অফ বরোদার পাশেই৷ মে ২০১৫ সালে ১৪ তম এশিয়াটিক সিংহ (প্যান্থেরা লিও পারসিকা) গণনা হয়েছিল। সিংহের সংখ্যা ছিল ৫২৩টি৷

গির জাতীয় উদ্যান ১৬ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এখানে ভ্রমণের সেরা সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে৷ মে মাসে খুব গরম থাকে। তবে বন্য জীবন দেখার এবং ছবি তোলার এটাই সেরা মাস৷ গির অরণ্যে গত পাঁচ বছরে ১০০ শতাংশ সিংহ বেড়েছে৷ বর্তমান সিংহের সংখ্যা ১০০০ অতিক্রম করে গিয়েছে৷ সিংহের উপস্থিতি এখন সৌরাষ্ট্রের উপকূলীয় অঞ্চলগুলির আশেপাশে রয়েছে৷ তারা অনুকুল পরিবেশে প্রজনন করে চলেছে। 

গির অরণ্যের একটি স্থলভাগ রয়েছে। স্থলভাগগুলি এবড়ো-খেবড়ো এবং চড়াই উতরাই। বিচ্ছিন্ন পাহাড়, মালভূমি এবং উপত্যকা নিয়ে গঠিত৷ সিংহ ছাড়াও গির অরণ্য অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন সরীসৃপ, নানা জাতের ইন্ডিয়ান সর্প (Snake), পাখি এবং কীটপতঙ্গের প্রজাতির পাশাপাশি প্রচুর উদ্ভিদের একটি অনন্য আবাসস্থল। গিরের বিখ্যাত ফ্লোরা বা উদ্ভিদ গোষ্ঠী হল– সেগুন, দুধলা ক্ষীর (রিটিয়া টিনক্টোরিয়া), ধাভডো (অ্যানোজিসিস ল্যাটিফোলিয়া), হারমো, সাদাদ, খাখরো ইত্যাদি। ফনা বা প্রাণী গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সিংহ (ত্রশিয়াটিক), চিতা বাঘ, হায়েনা, চিতল হরিন, সাম্বার, বুলে ষাড়, চৌশিঙ্গা, বুনো শুয়োর, কুমির।

উল্লেখযোগ্য পাখি হল– মালাবার হইসলিং থ্রাশ, অ্যাবেঞ্জ হেডেড গ্রাউন্ড থ্রাশ, প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার, ব্ল্যাক নেপড, ফ্লাই ক্যাচার, ইন্ডিয়ান পিট্টা, টাউনি, ঈগল, বোনেলির ঈগল, ক্রেস্টেড সার্পেন্ট ঈগল কিং, শকুন, ক্রোস্টেড হক ঈগল, পেইন্টেড স্টার্কস, পোলিকানস। দ্যা এশিয়ান লায়ন সবচেয়ে রাজকীয়। প্রকৃতির একটি অনন্য উপহার। শিকারের কৌশল সহ একটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী৷ সাধারনত প্রাপ্তবয়ঙ্ক মহিলা, তাদের শাবক এবং কয়েকটি পুরুষ নিয়ে শিকার করে থাকে।

বেলা দুটো নাগাদ সাফারির জন্য জিপ এল আমাদের নিতে৷ প্রতি জিপগাড়িতে ছয় জন৷ ভাড়া ৪৫০০ টাকা৷ আমরা চললাম গির অরণ্য সাফারিতে। জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা ভীষণ এবড়ো-খেবরো বা চড়াই উৎরাই। ভীষণ ঝাঁকুনি। ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা বা মোবাইল ছিটকে পড়ার মতো। সাফারি নিয়ন্ত্রকেরা জঙ্গল রুটকে ছয়টি ভাগে ভাগ করেন। অন্য রুটে যাওয়া চলবে না। এই নির্দেশ আমাদের পারমিটের সঙ্গে রয়েছে। আমরা ভাবি এই জঙ্গলের রাস্তা ওরা কিভাবে মনে রাখে। 

আমরা দেখলাম বন শুকর, নানা প্রজাতি অনেকগুলি ময়ূর, নানা প্রজাতির হনুমান, সাম্বার, নীলগাই এবং সবশেষে আমাদের দলের অনেকেই সিংহকে তার রাজকীয় ভঙ্গিতে দেখেছে। সবাই ছবিও তুলেছে৷ গির অরণ্যের মধ্যে দিয়ে রেল লাইন গেছে। জঙ্গলের রাস্তায় সেইজন্যে গেটও পড়ে৷ গাড়ি পার হতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। একটু এগিয়ে গেলেই লেক। সেখানে কুমির প্রজেক্ট চলে। আমরা দু একটি কুমিরকে দেখেছিলাম সাঁতার কাটতে৷ 

প্রকৃতপক্ষে এত বড় অরণ্য একদিনে দেখে শেষ করা যায় না৷ যাই হোক জঙ্গলের জন্যই এখানে আসতে হয় এবং সাফারি নিয়ে বিভিন্ন রুটে গেলে তবে সামান্য কিছু বোধগম্য হওয়া সম্ভব। বাইরে সুন্দর একটি বাজার আছে। সেখানে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো ম্যাংগো পাল্প৷ আশেপাশে প্রচুর আমের চাষ হয়, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মালদার মতো।  

অন্যান্য রাজ্য থেকেও এখানে আম আসে এবং আম প্রসেসিং কাছেই কোথাও হয়। আমরা ৪ কেজি ম্যাংগো পাল্প কিনেছিলাম মাত্র ৪০০ টাকায়৷ অল্প কিছু গোয়াভা পাল্প আমরা কিনি। আমরা ফিরে আসি প্রায় ছটা নাগাদ৷ তারপর আমরা আবার ওই বাজারটায় একটু ঘোরাঘুরি করি। আমাদের ট্যুরের কর্ণধার ডাক্তার হারুন শাহারুন ১৪ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেলে করে মটন জোগাড় করে৷ পিকনিকের ব্যবস্থা করল৷ মাংসের দাম ৭৫০ টাকা কিলো। এদিন রাতে সবাই  সেই সুস্বাদুযুক্ত মটন খেলো৷ 

পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে আমরা আমেদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গির অরণ্য থেকে আমেদাবাদের দূরত্ব ৪০২ কিলোমিটার। আমরা সকাল আটটায় বের হলাম, সন্ধ্যা আটটায় পৌছালাম। রাতের খাবার আমাদের হাতেই দিয়ে দিল দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আমরা ৮ নম্বর প্লাটফর্মে চলে গেলাম। বি-২ তে আমাদের ছয়জনের সিট পড়েছে৷ এই রাতের পরে সম্পূর্ণ ভ্রমনটাই ইতিহাস হয়ে যাবে৷ বিদায় গুজরাট– বিদায়। ‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন