সমকালীন প্রতিবেদন : রাত পোহালে কালীপুজো। চারিদিকে জ্বলে উঠবে আলোর রোশনাই। যার জন্যই এই উৎসবের আরেক নাম দীপাবলি। সারাদেশ তথা রাজ্যে উদযাপিত হবে এই উৎসব। এই রাজ্যেরই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রাচীন কালীপুজোর মধ্যে অন্যতম কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুরের 'মা মাটিয়া কালী।
ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী এই কালী পুজো দীর্ঘ ৬০০ বছরের পুরনো। দীপান্বিতা অমাবস্য্যায় পুজিত হন মা মাটিয়া কালী। যদিও আজ পর্যন্ত মায়ের কোনও মন্দির তৈরি হয়নি। মাটির থানেই পুজো হয় মায়ের। আবার মাটিতেই মিলিয়ে যান মা।
তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর উদ্যোগে শুরু হয় এই কালীপুজো। এত বছরেও মায়ের কোনও মন্দির তৈরি না হওয়ার কারণ এর পেছনে রয়েছে এক কাহিনী।
কথিত আছে, স্বপ্নের মধ্যে মায়ের আদেশের কারণেই কোনও মন্দির তৈরি করা হয়নি এখনও পর্যন্ত। এমনকি সেই সময় থেকেই মাটিতেই মায়ের পূজা হয় বলে জমিদার বংশের সকলেই নাকি মাটিতে শয়ন করতেন।
এই মা কালীর নাম প্রথম থেকে মা মাটিয়া কালী ছিল না। ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় 'রটন্তী কালী' নামে মায়ের পুজো করায় যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল জমিদার বংশ। পরবর্তীতে মাটিতে থাকার কারণে এই 'রটন্তী কালী' এলাকাবাসীর কাছে 'মা মাটিয়া কালী' নামে পূজিত হন।
দীপান্বিতা অমাবস্যায় মায়ের পুজোর সময় দূরদূরান্ত থেকে আগমন ঘটে ভক্তদের। বসে মেলাও। কথিত আছে, মা মাটিয়া কালীর থানের ঈশান কোণে ছিল একটি ঘর। যেখানে এক সময় মায়ের সাজগোজের গয়না রাখা হতো। তার পাশেই আছে পঞ্চমুখী শিব।
মায়ের মন্দির না থাকলেও পঞ্চমুখী শিবের জন্য করা হয়েছে মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, মা কালীর মতো পুরনো না হলেও এই শিব মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ২১৭ বছরেরও বেশি পুরনো।
কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুরে এতো পুরনো এক পঞ্চমুখী শিব মন্দির যে রযেছে, সেকথা অনেকের কাছেই অজানা। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন আমিনপুরের এই শিব মন্দির এবং মা মাটিয়া কালীকে দর্শন করতে।
বর্তমানে জমিদারি প্রথা না থাকলেও বর্তমানে এই পুজোর দেখাশোনা করেন জমিদারের এক সেবায়েত এবং তাঁর বংশধরেরা। তাঁদেরই একজন জানালেন, জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর থেকে তাঁরাই পুজোর দেখাশোনা করেন।
প্রাচীন রীতি মেনে আজও বলি প্রথা চালু রয়েছে মাটিয়া কালীপুজোতে। পুজো উপলক্ষে ছোট মেলাও বসে বহু বছর ধরে। এই কালী মা যেহেতু মাটির থানে পুজিত হন, তা মেলায় আসা ব্যবসায়ীরাও মাটিতে মাদুর বা আসন পেতে বসেই ব্যবসা করেন। শুধুমাত্র পুজোর সময় নয়, বছরের বাকি সময় গুলিতেও বহু মানুষের আগমন ঘটে এখানে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন