সমকালীন প্রতিবেদন : সাত ডাকাত ভাই জমিদারবাড়িতে ডাকাতি করে ফিরছিল। আর সেই সময় ডাকাতদের উদ্দেশ্যে হঠাৎ মাকালী বলে উঠলেন, তোরা আমাকেও তোদের সঙ্গে নিয়ে চল। মায়ের সেই আদেশ শুনে ডাকার দলের মধ্যে থেকে কয়েকজন মাকে নিয়ে চলে আসে। কিন্তু মাকে কোথায় রাখবে, তা ঠিক করতে পারছিল না।
অবশেষে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে বনগাঁর ইছামতি নদীর পাড়ে এসে হাজির হয় ডাকাত দল। বন জঙ্গলে ঘেরা বট গাছের নিচে মাকে আশ্রয় দিল। আর তারপর থেকে সেখানেই পুজিত হয়ে আসছেন সাত ডাকাতের প্রতিষ্ঠা করে সেই মাকালী।
কথিত আছে অবিভক্ত বাংলার যশোরের জমিদার বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় সাত জনের ডাকাত দল। সম্পর্কে তারা ছিল সাত ভাই। জমিদারবাড়িতে ডাকাতি করে ফেরার পথে মাকালীর আদেশে মাকেও তারা সঙ্গে করে নিয়ে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুরাতন বনগাঁয় এসে পৌঁছায়।
সেখানে ইছামতি নদীর ধারে জঙ্গল ঘেরা বটগাছের নিচে কালী মায়ের মূর্তি রেখে পুজোর পুরোহিত খুঁজতে বের হন ডাকাত দল। স্থানীয় এক চক্রবর্তী পুরোহিতকে খুঁজে বের করেন। এরপর তিনিই এইমায়ের পুজো শুরু করেন। এই ঘটনা প্রায় ৪০০ বছর আগের।
পুরাতন বনগাঁর এই কালী মন্দির এরপর থেকে সাত ভাই কালীতলা নামে পরিচিতি লাভ করে। বছরের ৩৬৫ দিন নিয়ম মেনে দুবেলা পুজোর আয়োজন হয়। সারা বছ ভক্ত সমাগম হলেও কার্তিক মাস এবং পৌষ মাসে বাইরের থেকেও প্রচুর ভক্ত এই মন্দিরে উপস্থিত হন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁ থানার কালুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরাতন বনগাঁর ইছামতি নদীর ধারে বর্তমানে প্রায় এক বিঘা জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই মন্দির প্রাঙ্গন। মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাজার, কমিউনিটি হল এবং স্কুল।
এই মন্দিরের পুরোহিতরা বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন। বর্তমানে একই বংশের সাতজন পুরোহিত পালা করে মায়ের নিত্য পুজো করেন। তবে প্রাচীন যে মূর্তিটি ছিল, সেটি বটগাছের শিকড় দিয়ে ঢেকে গেছে। বর্তমানে যে মূর্তিটি দেখা যায়, সেটি পরে তৈরি করা হয়েছে। কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে বিশেষভাবে পুজোর আয়োজন হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন