সমকালীন প্রতিবেদন : একসময় এই দুর্গাপুজোয় মহিষ, পাঠা বলি দেওয়া হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাবনারও বদল ঘটে। এই বংশের বর্তমান প্রজন্মের আপত্তিতে সেই অমানবিক প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবর্তে চালু হয় আখ, চালকুমড়ো বলি। আর দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয় মধু, চিনি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ গোবরডাঙা। আর এখানেই রয়েছে মুখোপাধ্যায় পরিবারের জমিদার বাড়ি। আর এই পরিবারের দুর্গাপুজো এবারে ৩১১ বছরে পরলো।
গত দুবছর করোনার কারণে জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো হয় নি। তবে নিয়ম মেনে প্রসন্নময়ী কালী মন্দিরে ঘট পুজোর মাধ্যমে দুর্গাপূজা হয়েছে।
এবছর পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। আর তাই নতুন উদ্যমে পুরনো রীতি মেনে পুজোর আয়োজন চলছে। বাবলা কাঠ দিয়ে তৈরি কাঠামোয় এই পরিবারের একচালার দুর্গাপ্রতিমা নির্মিত হয়।
জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। জমিদার বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি হয় প্রতিমা। সেই নিয়ম আজও চলে আসছে।
এই পরিবারের অষ্টম বংশধর অঞ্জনপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানান, ১৯৯৭ সালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে গুরুদেবের সঙ্গে আলোচনা করে পশু বলি দেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
একসময় দেশের নামী সঙ্গীতশিল্পীরা এই বাড়িতে পা রেখেছেন। গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে একসময় ভিড় উপচে পরতো এলাকার মানুষের।
এখনও অনেক মানুষই এই পুজো দেখতে আসেন। কর্মসূত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যদের অনেকেই পুজোর দিনগুলিতে এই বাড়িতে হাজির হওয়ার চেষ্টা করেন।
জমিদার বাড়ির এক গৃহবধূ স্বাতী মুখোপাধ্যায় জানালেন, এই পরিবারের পুরনো সদস্যরা যতদিন বেঁচে ছিলেন, তখন ওই পরিবারের পুজোর মাত্রা অন্যরকম ছিল। সেইসময় পুজোয় আরও বেশি আত্মীয় সমাগম হতো।
দুর্গাপুজো আসছে। স্বাভাবিকভাবেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে গোবরডাঙা জমিদার বাড়িতে। বাড়ির পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি চলছে বাড়ি রং করার কাজ। সারা বছর এই বাড়িতে পরিবারের হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য থাকলেও পুজোর সময় আত্মীয়-পরিজনে ভরে উঠবে জমিদার বাড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন