Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

৩৫০ বছরের পুরনো পরবে একদিনের রাজাকে দেখতে ভিড়

 

A-crowd-to-see-the-one-day-king

শম্পা গুপ্ত : রাজত্বও ‌নেই, রাজসিংহাসনও নেই। তবে আছেন রাজা। যদিও তা একদিনের জন্য। আর এমনই একদিনের রাজাকে নিয়ে মেতে ওঠেন হাজার হাজার মানুষ। শান্তির বার্তা দিতে রাজবেশে থাকা সেই রাজা সাদা রুমাল ওড়ান, ছাতা তোলেন। এমনই এক পরবের কথা জানুন এই প্রতিবেদনে।

আদিবাসী অধ্যুষিত পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল চাকলতোড় গ্রাম। পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের টামনা থানার অধীনে থাকা এই গ্রামে প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ছাতা পরব অনুষ্ঠিত হয়। আর সেখানেই দেখা মেলে একদিনের রাজাকে। সেই রাজাকে দেখতেই চাকলতোড় গ্রামের মাঠে ভিড় জমান দূরদুরান্তের বহু মানুষ।

শোনা যায়, প্রায় সাড়ে তিন'‌শ বছর আগে এই পরবের সূচনা হয়েছিল। তখন পঞ্চকোট রাজবংশের রাজত্ব ছিল এই অঞ্চলে। সেইসময় কুমার শত্রুঘ্ন নামে এক রাজা ছিলেন। তার সঙ্গে জঙ্গলমহলের ভূমিজ রাজা ইন্দ্রনারায়ণ সিং এর একবার যুদ্ধ বাধে।

রাজা ইন্দ্রনারায়ণের সেনাবাহিনীতে ছিলেন আদিবাসীরা। গ্রামের মাঠের এই যুদ্ধে শেষপর্যন্ত পরাজিত হন ইন্দ্রনারায়ণ। আর তাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন ইন্দ্রনারায়ণের সৈন্যরা। যদিও কুমার শত্রুঘ্ন জানিয়ে দেন যে, বিপক্ষের অর্থাৎ ইন্দ্রনারায়ণের পক্ষের সাধারন সেনাদের সঙ্গে তাঁর কোনও শক্রতা নেই। 


আর তাই তিনি তখন সাদা রুমাল উড়িয়ে যুদ্ধ বিরতির কথা ঘোষণা করেন। শান্তির প্রতীক হিসেবে ছাতা তুলে ধরেন। সেই থেকেই প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ৪০ ফুটের ছাতা তুলে ধরা হয়। যদিও এখন আর সেই রাজত্ব নেই। রাজসিংহাসনও নেই। কিন্তু ঐতিহ্যের রাজা আছেন।

পুরনো সেই রীতি মেনে এদিন বিকেলে মাথায় পাগড়ি, কোমড়ে তরোয়াল নিয়ে রাজার পোশাকে রাজবাড়ি থেকে চাকলতোড় গ্রামের মেলার মাঠে হাজির হলেন ৩৮ বছরের একদিনের রাজা অমিতলাল সিংদেও। আগে রাজবাড়ি থেকে রাজা পালকিতে চড়ে আসলেও এদিন রাজা এলেন গাড়ি চড়ে।

রাজা অমিতলাল সিংদেও পকেট থেকে সাদা রুমাল বের করে তা ওড়ালেন। এরপর শান্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরলেন ৪০ ফুটের ছাতা। আর তারপরই শুরু হল ছাতা পরব। তার আগে পুরোহিত ডেকে মেলার মাঠে পুজো দেওয়া হল। 

কথিত আছে, এই মেলা দর্শন করলে সারা বছর ভালো কাটে। আর সেই বিশ্বাসে পুরুলিয়া জেলা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এমনকি ভিন রাজ্য থেকেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ এই মেলায় হাজির হন। 

ঝাড়খন্ড থেকে এই মেলায় আসা রাজু সিংদেও, হুগলী থেকে আসা চম্পা সোরেনরা জানালেন তাঁদের অনুভূতির কথা। মাদলের তালে ঝুমুর এবং আদিবাসী নৃত্যের মধ্য দিয়ে সারা রাত ধরে চলে এই মেলা। ভোরের আলো ফুটতেই শেষ হয়ে যায় এই ছাতা পরব। আবার এক বছরের অপেক্ষা।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন