নতুন জেলার নাম ইছামতী- এর যৌক্তিকতা কি ?
অজয় মজুমদার
ইছামতীর উৎসের কথা অল্পবিস্তর সকলেরই জানা। তবুও সবাইকে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি। নদীয়ার মাজদিয়া অঞ্চলে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে ইছামতীর উৎপত্তি৷ এটি আন্ত:সীমানা নদী, যা ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। এই নদী কোথাও কোথাও দু'দেশের মধ্যে সীমানা তৈরি করেছে৷ এটি উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার আংরাইল থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার বা ১৩ মাইল এবং গোয়ালপাড়া থেকে কালিন্দী, রায়মঙ্গল প্রবাহ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে আন্তর্জাতিক সীমানা গঠন করে।
এই নদী বর্তমানে নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ, বনগাঁ লোকসভা এবং বসিরহাট লোকসভার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত৷ বসিরহাটের ইটিন্ডা থেকে রায়মঙ্গল পর্যন্ত ইছামতী কিছুটা জীবন্ত রয়েছে। কিন্তু উৎসস্থল থেকে বাকি অংশ সম্পূর্ণটাই মৃতপ্রায় ইছামতীর অস্তিত্ব রচনা করেছে। তার নেই কোনও সংস্কার, নেই কোনও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।
আমরা শুধু ইতিহাসটাই বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। বিভূতিভূষণের একটি উপন্যাসের নাম ইছামতী৷ রাজা প্রতাপাদিত্যের নৌবহর নাকি বনগাঁতেই থাকতো৷ সবই ইতিহাস। তখন বনজঙ্গল আর বাঘ, সজারুর ভয়৷ মানুষের বসবাস ছিল খুবই নগণ্য৷ তার পর মাঝেমধ্যেই কলেরা, বসন্তে বহু মানুষ মারা যেতো৷ ১৯৩৬ সালে বনগাঁ হাইস্কুলের পত্রিকা থেকে জানা যায় এসব পুরানো কথা।
ইছামতী নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক আবেগ আছে, অনেক ভালো লাগা আছে। ছোট থেকে বড় হওয়ার অভিব্যক্তিগুলি অন্তরে লেগে আছে। তাই বলে জেলার নাম ইছামতী, তা হয় নাকি! বনগাঁর নাম তো অনেক পুরনো, প্রতিষ্ঠিত, যোগ্য এবং ঐতিহ্যবাহী। ইছামতীর নামে রেস্টুরেন্ট, প্রেক্ষাগৃহ, লটারীর দোকান, শপিংমল ইত্যাদি হতে পারে। বা এই নামে এইসব সংস্থাগুলি আছেও। কিন্তু জেলার নাম ইছামতী খুবই বেমানান।
বনগাঁর আশেপাশে কম করেও সাতটি বড় বড় বাওড় রয়েছে। এগুলি একদিন নদী ছিল৷ তাহলে কেনইবা ওই বাওরের মা-দিদিমা নদীর নাম আমরা ভুলে গেছি। ইছামতীর নামে জেলা না করে বরং একে বাঁচানোর চেষ্টা করা ভালো। বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে সংস্কারে হাত দেওয়ার জন্য কি কাজ করা হয়েছে, তার বিশ্লেষণ করুন৷
বনগাঁয় প্রয়াত সুভাষ চ্যাটার্জী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ইছামতি নদীর সংস্কার কমিটির প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি বেঁচে থাকতে বহু চেষ্টা করেছিলেন রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করে। কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার হলেও, বহু জায়গায় ধান ও কচুর চাষ চলছে। দেখভালের কেউ নেই। একটি নদীর নামে জেলার নাম। আমাদের নতুন জেলা কি এতটাই ক্ষয়িষ্ণু, নদীর মতো। বনগাঁর কোনও সচেতন ব্যক্তি এটা মেনে নিতে পারবেন না।
তাই নতুন জেলার নাম হোক বনগাঁ। আর বর্তমান সময়ে যখন অর্থনৈতিকভাবে রাজ্য এবং কেন্দ্র অনেকটাই বিপন্ন, ঠিক সেই সময় সাতটি জেলা করে আরও অনেকটা দেশকে পিছিয়ে দিয়ে লাভ কি ? যদি শেষ পর্যন্ত বনগাঁ নতুন জেলা হয়ই, তবে পুলিশ জেলার মতো নাম হোক জেলা বনগাঁ৷ এটাই বনগাঁয় জন্ম নেওয়া নাগরিকদের দাবি৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন