অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নেশায় বিপন্ন মানুষ
অজয় মজুমদার
স্টাফরুমে বসে সংবাদপত্রের পাতায় চোখটা সবে রেখেছি। এমন সময় সহকর্মী সুব্রত এসে বলল, স্যার বোনের সংসারটা আর ধরে রাখা গেল না৷ বললাম কেন ? ও বলল android এর নেশায় বিভোর৷ ছেলে–মেয়ে কি খেলো, কোথায় গেলো, ভগ্নিপতি অফিস যাবে কিন্তু কি খেয়ে যাবে, কোনওদিকে খেয়াল নেই৷ শুধু চ্যাটিং চলছে৷ কিভাবে সংসারটা বাঁচানো যায়, একটা পরামর্শ দিন।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন আমাদের দিয়েছে অনেক, কিন্তু নিয়েছেও কম নয়। ঘরের মহিলারা দুপুরে খাওয়ার পরে শরৎচন্দ্র, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা বুদ্ধদেব কোনও উপন্যাসই পড়েন না। বই পড়ার নেশা তাই অবলুপ্ত৷ আড্ডায় এসে তর্কাতর্কি হলেই নেট খুলে তর্কের অবসান ঘটান। নলেজ ব্যাংক হিসাবে অনেকেই ব্যবহার করেন। হোয়াটসঅ্যাপ এ চ্যাটিং চলে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সত্যি মিথ্যে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে৷
জন্মদিনে ঘটা করে কেক কাটার ছবি, হ্যাপি বার্থডে উইশ করা, তারপর সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে নিজেদের বেশ কেউকেটা ভেবে নেওয়া। কেউ কেউ আবার একে ভালো কাজেও লাগাচ্ছেন। কোচিং বাইজুস থেকে আকাশ, বাতাস ক্লাস গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও জিনিস যার লাভ এবং ক্ষতি রয়েছে, কিন্তু তার অসুবিধে বা অপকারিতা এগুলো অবশ্যই থাকবে।
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের প্রচুর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিকর দিকও অবহেলা করা যায় না। মোবাইল ফোন আবিষ্কার হওয়ার পর প্রযুক্তির অধিক উন্নতি হয়েছে। ইন্টারনেট গেমিং, মনোরঞ্জন টিভি দেখা, গান শোনা, ভিডিও চ্যাটিং, ভয়েস কল ইত্যাদি প্রচুর কাজ আমাদের মোবাইল থেকে করে নিচ্ছি।
বিভিন্ন জায়গায় টাকা ট্রান্সফার করে জিনিস কিনছি বা প্রয়োজনে টাকা পাঠাচ্ছি৷ কোনও মানি অর্ডার নয়, কোনও ব্যাংকের দুয়ারে নয়৷ নিজের অ্যান্ড্রয়েড থেকে৷ দিনের প্রায় অধিকাংশ সময় আমরা মোবাইলের মধ্যেই কাটিয়ে ফেলছি। যার জন্য মোবাইল থেকে লাভের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের উপর অবশ্যই পড়ছে।
ফ্রান্সে ওলে জোহানসন ও ওরজান হলবার্গ তাদের সমীক্ষায় দেখিয়েছেন- রেডিও ওয়েভ বিকিরণ ক্যান্সার ও হাঁপানির জন্য দায়ী। তাঁরা ফুসফুসের ক্যান্সার এর কারণ হিসাবে ধূমপানের সঙ্গে একই দোষে দুষ্ট করেছেন রেডিও ওয়েব বিকিরণও৷
ফ্রান্সে সান্তিনি এবং সুইডেনের স্যান্টস্ট্রাম ও মাউন্ড এর সমীক্ষা থেকে জানা যায়– সেলফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রাহক বিভিন্ন নার্ভ ঘটিত সমস্যায় ভুগছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাথা ধরা, গা ঝিম ঝিম করা, মাথা যন্ত্রণা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ক্লান্তি ও ঝিঁঝিঁ ধরা৷
জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের নাইলাতে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে মোবাইল ফোন বিকিরণের বিপজ্জনক দিক নিয়ে তিনি সমীক্ষা করেন। এই অঞ্চলে দুটি মোবাইল ট্রান্সমিটার অ্যান্টেনা বসানো হয় ১৯৯৩ সালে। এর ফলে ক্যান্সারের ভয়াবহতা বেড়ে যায়৷ এক হাজারের কাছাকাছি রোগী পাওয়া যায়, যাদের বসবাসের স্থান নাইলা শহর৷
জার্মানিতে ১২০০ চিকিৎসক মোবাইল প্রযুক্তিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ডাক দিয়েছেন৷ এছাড়াও, সব সময় বিভ্রান্ত করা, স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যা, অতিরিক্ত সময় নষ্ট হওয়া, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা, কাজে মন না বসা, মোবাইল নেশা, ফ্রড হওয়া, অতিরিক্ত খরচ৷
এইসব জেনেই হোক আর না জেনেই হোক, আমাদের সম্মিলনীর আড্ডায় আমজাদ ভাই এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ডাক্তার প্রদীপ শিকদার সেই বাবরের আমলের মুঠোফোনই ব্যবহার করেন। দুজনের ক্ষেত্রেই এই ফোনের কাজ শুধু ধরা আর ছাড়া৷ কয়েকজন কাছের মানুষের নম্বর। বাকি যার প্রয়োজন সে করুন৷ ওরা শুধু ধরবেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোন ওদের আক্রান্ত করতে পারেনি৷ ওদের কোনও আক্ষেপও হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন