সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতের ১৬২ বছরের পুরনো রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করলো সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ জানিয়ে দিল, যতদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে পর্যালোচনা না করবে, ততদিন পর্যন্ত এই আইন কার্যকর করা যাবে না। এদিন সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল।
ব্রিটিশ রাজত্বকালে ১৮৬০ সালে ভারতে এই আইন তৈরি হয়। মূলত দেশের স্বার্থ, সুরক্ষা বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহনের জন্য এই আইন তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১৩ হাজার অভিযুক্ত জামিন অযোগ্য এই আইনে বর্তমানে জেল খাটছে।
ব্রিটিশদের তৈরি এই আইনে ১৮৯১ সালে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপর একে একে বাল গঙ্গাধর তিলক, মহাত্মা গান্ধীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও এই আইন বাতিল হয় নি, যেখানে ইংল্যান্ডে বর্তমানে এই আইন বাতিল হয়েছে। সাম্প্রতিককালে কানাইয়া কুমার, স্ট্যান স্বামী সহ একাধিক সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়েছে।
এই আইন বাতিলের আবেদন জানিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং এডিটর্স গিল্ড সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার শুনানীতে এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪ এ ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। ২০২১ সালের ১৫ জুলাই এই মামলার শুনানী চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এই আইন একটি ঔপনিবেশিক আইন। বর্তমানে এর অপব্যবহার হচ্ছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও এই আইনের কার্যকারিতা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে খোদ সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালত আগেই জানিয়ে দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এই মামলা রুজু করা হয়েছে, তারা জামিনের আবেদন করতে পারবেন। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, কেন্দ্র সরকার যতদিন না এই আইন নিয়ে পুনর্বিবেচনা করবে, ততদিন এই আইন কার্যকর করা যাবে না। নতুন করে কারোর বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করা যাবে না। এই ঘোষনায় খুশি সমাজকর্মীরা। তাঁদের অবশ্য আরও দাবি, এরসঙ্গে ইউএপিএ আইনও বাতিল করা প্রয়োজন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন