সমকালীন প্রতিবেদন : একদিকে হাতের নাগালে মনোরঞ্জনের নানা হাতছানি, অন্যদিকে পশুদের নিয়ে খেলা দেখানোর উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে সার্কাসের প্রতি আগ্রহ কমছে সাধারণ মানুষের। আর তার ফলে একপ্রকার বিলুপ্তির পথে বহুদিনের এই শিল্প।
একটা সময় ছিল, যখন শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র সার্কাসের তাঁবু পরতেই এলাকার মানুষের মধ্যে একটি উন্মাদনা তৈরি হতো। বিশেষ করে সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত জোকার, বিভিন্ন পশুপাখি এবং শিল্পীদের নিয়ে। সার্কাসের হাতির খাবার জোগাড় করতে হাতিকে নিয়েই শহর, গ্রামের পথ ধরে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সেটিও ছিল সার্কাসের আর একভাবে প্রচার।
একটি সার্কাস দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকেন শতাধিক পরিবার। পরোক্ষভাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। যে এলাকায় সার্কাসের তাঁবু পরে, অস্থায়ীভাবে হলেও সেই অঞ্চলে এই সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করেন।
বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসে মোবাইল বা কম্পিউটারেই দেশ বিদেশের নানা সার্কাস দেখতে পাচ্ছেন মানুষ। বাড়ির লোকেরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সার্কাস দেখানোর সখ এভাবেই মিটিয়ে দিচ্ছেন। তার উপর সার্কাসের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল বাঘ, সিংহ, হাতি সহ নানা পশুর খেলা। পশুপ্রেমীদের আপত্তিতে এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞায় এখন পশুর খেলা দেখানো এমনকি সার্কাসে রাখাও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছে দর্শক।
একসময় রাজ্যে একাধিক সার্কাস কোম্পানী ছিল। শীতের পাশাপাশি সারা বছরই কমবেশি সার্কাসে ভিড় জমাতেন দর্শকেরা। পরিস্থিতি এখন অনেক বদলে গেছে। সার্কাস তার জৌলুস হারাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে অনেক নামী সার্কাস কোম্পানী। ধিক ধিক করে চলছে অজন্তার মতো হাতে গোনা দু একটি সার্কাস কোম্পানী। তাও আর কতদিন চলবে, সেই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন এই সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।
এই মুহূর্তে বনগাঁয় চলছে অজন্তা সার্কাস। এই সার্কাসের ম্যানেজার জানালেন, 'শনি এবং রবিবারের নাইট শো ছাড়া দর্শকই হচ্ছে না। প্রতিদিনের খরচটুকু তোলাই এখন কঠিন হয়ে পরছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মালিকপক্ষ সার্কাস দল চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, সন্দেহ। ফলে দর্শকের আগ্রহের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন