Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২

ভ্রমন : রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য ‌মংপু

Rabindra-Smritidhanya-Mongpu

রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য ‌মংপু

অনুপম চক্রবর্ত্তী

মংপু নামটা বলতেই হৃদয়ে কেমন যেন একটা দোলা লাগে। দার্জিলিং থেকে 32 কিলোমিটার দূরের এই পাহাড়ী জনপদ বিখ্যাত হয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য হয়ে। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ - অর্থাৎ জীবনের শেষ তিন বছরে চারবার রবীন্দ্রনাথের স্পর্শ পেয়েছিল মংপুর মাটি। কিন্তু কেন হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ মংপু থাকার কথা ভেবেছিলেন তার একটা ইতিহাস আছে।

ম্যালেরিয়া আক্রান্ত তৎকালীন বাংলায় ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রয়াল বোটানিক্যাল গার্ডেনের অধ্যক্ষ হয়ে কলকাতায় এলেন থমাস অ্যান্ডারসন। সেই সময়ে ম্যালেরিয়ার একমাত্র ওষুধ কুইনাইন তৈরি হতো যে সিঙ্কোনা গাছ থেকে, তা সমতলে ফলানো সহজ কথা নয়। তাই ১৮৬২ সালে অ্যান্ডারসন সাহেব দার্জিলিং এর কাছে মংপু নামক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলেন সিঙ্কোনা গাছের চাষ। অল্পদিনে দারুণ সাফল্য এলো। তাতেই উৎসাহিত হয়ে মংপু অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হল সিঙ্কোনা চাষ ও কুইনাইন উৎপাদন। 

এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হলো সিঙ্কোনা ডাইরেক্টরেট। আর এই সিঙ্কোনা ডাইরেক্টরেটের প্রধান অধিকর্তা হয়ে একসময় মংপুতে আসেন ডঃ মনমোহন সেন। তাঁরই সহধর্মিণী ছিলেন রবীন্দ্র স্নেহধন্যা মৈত্রেয়ী দেবী। তাঁদেরই আন্তরিক আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরেও বারবার এসেছেন মংপুতে। প্রকৃতির উদার আতিথ্যে তিনি পেয়েছেন অপার আনন্দ আর তাঁর আগমনে, প্রবাসী সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় 'মংপু মায়াপুরী তে পরিণত হয়েছিল।' 

রবীন্দ্রনাথ মংপু থাকাকালীন ডঃ মনমোহন সেনের যে আবাসনটিতে অবস্থান করতেন, পরবর্তীতে সেটি রবীন্দ্র মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। মিউজিয়ামটিতে 'ছিল', রবীন্দ্রনাথ মংপু তে বসে লেখার জন্য যে টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করতেন সেটি। তাঁর ব্যবহৃত ইজেল, রংতুলি, বায়োকেমিক ওষুধের শিশি, বিছানা, চেয়ার ইত্যাদি। 'ছিলো' বলার কারণ হলো, বর্তমানে যেহেতু রবীন্দ্র ভবনটি সংস্কারের কাজ চলছে, সেইজন্য এখন সেগুলি সিঙ্কোনা প্লান্টেশনের অফিসে সযত্নে রক্ষিত রয়েছে। সেই বাড়িতে আজও রয়েছে কবিগুরুর নামকরন করা সপ্তপর্ণী গাছ। 

আমরা সম্প্রতি ঘুরে এলাম এই মংপু থেকে। রবীন্দ্র ভবনকে আজও যিনি চোখের মণির মতো সযত্নে আগলে রেখেছেন তিনি এই ভবনের কেয়ারটেকার। নাম বললেন শিশির রাউত। আদতে নেপালি জনগোষ্ঠীর মানুষ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিন্তায়, মননে। রবীন্দ্রনাথ যখন রম্বিক থেকে পালকিতে করে আসতেন, তখন শিশিরবাবুর দাদু ভীমলাল রাউত ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পালকিবাহকদলের একজন। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নানা কথা শুনেছেন বাবা দেবীলাল রাউতের কাছ থেকেও। এটুকু সম্পর্ককে সম্বল করেই আজও তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন রবীন্দ্র ভবনটিকে সযত্নে রক্ষা করবার। সুখের কথা সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভবনটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছেন। 

আমাদের অনুরোধে তিনি গেয়ে উঠলেন একের পর এক গান। কখনও 'দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে' কখনও বা 'মেঘ বলেছে যাব যাব'। শেষ গান ছিলো 'সেই ভালো, সেই ভালো, আমারে না হয় না জানো'। ভাঙা ভাঙা বাংলা উচ্চারণে কিন্তু পবিত্র আন্তরিকতায় গাওয় সেসব গান। সেই গানের ধারায় স্নাত হতে হতে ভাবছিলাম, রবীন্দ্রনাথ আজও কত মানুষের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারেন। 

কীভাবে যাবেন— 

শিয়ালদা বা হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি অথবা বিমানে বাগডোগরা। শিলিগুড়ি থেকে ৫২ কিলোমিটার এবং কালিম্পং থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে মংপুর অবস্থান। দার্জিলিং থেকে ৩২ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে বাস বা গাড়ি পাবেন। বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছরই যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন—  

মংপু শহরে বেশ কিছু হোটেল আছে। তবে রবীন্দ্র ভবনের কাছে হোম স্টে আছে। হোটেল এবং হোম স্টে ইন্টারনেটে সার্চ করে বুকিং করা যাবে। ফাঁকা থাকলে সরাসরি গিয়েও বুকিং করা যাবে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন